সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটের বিশ্বনাথের তেলিকোনা এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনকে সম্প্রতি বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বরখাস্তের পর গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ওই অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন কর্তৃপক্ষ।
এনিয়ে দু’পক্ষে বাতবিতন্ডা শুরু হলে থানা পুলশের এসআই দিপঙ্কর ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্তণে আনেন। আর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ঘটনার পর থেকে এডহক কমিটির সাবেক সভাপতি নিজামুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মালানা হরমুজ আলী পক্ষ এবং বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।
মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনের দাবি, তাকে বেআইনিভাবে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
তিনি (অধ্যক্ষ) বলেন, হাইকোর্টের আদেশ ও শিক্ষাবোর্ডের আদেশ কপি নিয়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। শিক্ষাবোর্ডের আইন অনুযায়ী মাদ্রাসার এডহক কমিটি কোনভাবেই তাকে বরখাস্ত করতে পারেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে মাদ্রাসা কর্তপক্ষের দাবি, এডহক কমিটি করতে না দেওয়া আর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অধ্যক্ষকে প্রথমে ৪মাসের ছুঠি দেওয়া হয়। আর মাদ্রাসার হিসেব না দেওয়ায় পরবির্ততে শিক্ষক ও এডহক কমিটির নেতৃৃবন্দরা গত ৬জুলাই অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করেন।
এডহক কমিটির সাবেক সভাপতি নিজামুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার ১৪লাখ টাকার হিসেব না দেওয়ায় অধ্যক্ষকে সম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়। রোববার মেয়াদোত্তীর্ন আদেশ কপি নিয়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে ঢুকতে চাইলে অধ্যক্ষকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাদ্রাসার এডহক কমিটির নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকরা জানান, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসার গভর্নিংবডির সভাপতি রাবেয়া খাতুন মারা যাবার পর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের একাধিক নির্দেশনা সত্বেও অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইন কমিটির সভাপতির শুন্য পদ পুরন করেননি। এরপর ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বোর্ড থেকে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হলেও বোর্ডের একাধিক নির্দেশ অমান্য করেন এবং দীর্ঘ ১১মাসেও কমিটি করতে ব্যর্থ হন।
এরপর ২০২২সালের ১৫ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি গঠন করে কমিটি অনুমোদনের প্রস্তাব বোর্ডে প্রেরণ করতেও তিনি ব্যর্থ হন।
২৮ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান অধ্যক্ষকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক মুখলিছুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদানসহ এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
এরপর তিনি নিজামুল ইসলামকে সভাপতি, অধ্যক্ষ আবু তাহির মোহাম্মদ হোসাইনকে সদস্য-সচিব, নুর উদ্দনকে অভিভাবক সদস্য এবং এটিএম নুর উদ্দিনকে শিক্ষক প্রতিনিধি করে ৪সদস্যের কমিটি গঠন করে বোর্ডে প্রেরণ করেন। তারই প্রেক্ষিতে চলতি ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি কমিটি অনুমোদন দেয় মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড।
এদিকে অধ্যক্ষ তার অপসারনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে গত ৭ জুলাই পর্যন্ত ৬মাসের স্থগিতাদেশ পেয়ে স্বপদে বহাল থাকেন। ফলে বিধি মোতাবেক চলতি ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত মতে অধ্যক্ষকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ৪মাসের ছুঠি প্রদান করা হয়।
এসময় মাদ্রাসার নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেওয়া হয় মাওলানা হরমুজ আলীকে।
অন্যদিকে অধ্যক্ষকে ছুঠিতে পাঠিয়ে বিধিমোতাকে জেনারেল কমিটি নির্বাচনপূর্বক বোর্ডে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। একই সময়ে (মার্চে) একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তপূর্বক সত্যতা প্রমানিত হলে মাদ্রাসা অধিদপ্তর ও শিক্ষাবোর্ড এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি ২০২৩সালের ৬জুলাই এডহক কমিটি অধ্যক্ষকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে এবং এমপিও স্থগিতের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করে।
বর্তমানে বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের জন্য আপেক্ষমান রয়েছে।
অপরদিকে গত ২০ জুলাই মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড এবং ৭জুলাই হাইএকার্টের আদেশ কপির মেয়াদ শেষ হয়। আর ওই কপি নিয়ে গত রোববার মাদ্রাসায় গিয়ে হাজির হন অধ্যক্ষ আবু তহির মোহাম্মদ হোসাইন। এসময় তাকে মাদ্রাসায় প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।
বিশ্বনাথ থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আইনশৃংখলার অবনতি ঘটালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।