গত কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মস্কো ইতোমধ্যে পূর্ব ইউরোপে দেশটির সীমান্তে সেনা, ক্ষেপণাস্ত্র ও ভারী গোলাবারুদ মোতায়েন করেছে বলে দাবি করে আসছে পশ্চিমারা। সূত্র: বিবিসি।
পশ্চিমা সমর্থিত জোটের সামরিক বিশেষজ্ঞরা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর গতিবিধি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চলেছেন। তারা বিভিন্ন ম্যাপ এঁকে কিয়েভের দিকে অগ্রসর হাওয়ার ক্ষেত্রে রুশ বাহিনী কি ধরনের কর্ম পরিকল্পনা নিচ্ছে সে বিষয়েগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
তবে ইউক্রেন সীমান্তে বসবাসকারীরা যারা কিনা সরাসরি হামলার মুখোমুখি হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তারাই মনে করছে রাশিয়ার হামলা চালানোর সম্ভাবনা খুবই কম। তবে যুদ্ধ হবে কি হবেনা সে বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছেনা।
কিয়েভের বাসিন্দা দিমিত্রি দুভাস। তিনি একজন বিক্রেতা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে নিজের ফ্ল্যাটে বসে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে চাইলে সীমান্তে সেনা সামাবেশ করতে পারে। এরপর চাইলে আক্রমণও চালাতে পারে। এই ঘটনাটিও তার বিপরীত কিছু নয়।’
২০১৪ রাশিয়া সমর্থিত বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হলে দিমিত্রি স্বেচ্ছাসেবক সেনা হিসেবে লড়াইয়ে অংশ নেন। ২০১৫ সালে লড়াইয়ের অবসান ঘটাতে দুই পক্ষের মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র বিরতি কার্যকর করা হয়। কিন্তু অস্ত্র বিরতি চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
দিমিত্রি বর্তমানে সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। এখন তিনি তার গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি কিনে রাখছেন। এছাড়া দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে খাবারের যাতে অভাব না হয় সে জন্যও খাদ্য সংরক্ষণ করছেন। একই সঙ্গে লড়াইয়ের দক্ষতা বাড়াতে তিনি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন।
পশ্চিমা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কিয়েভ আক্রমণ এবং এ সংক্রান্ত সব পরিকল্পনা করার জন্য দায়ী করেছে।
এদিকে বোমা বা বিমান হামলা হলে তা থেকে কিভাবে বাঁচতে হবে সে বিষয়ে কিয়েভের সব স্কুলে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাসিন্দাদের যাতে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায় সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। হামলা হলে সহজে যাতে পালিয়ে পশ্চিমের দিকে যাওয়া যায় সেজন্য পথ খুঁজছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
এছাড়াও পেনশনভোগী সরকারি কর্মচারীরা দেশকে রক্ষায় সেনাবাহিনীর পরিচালিত সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন। মহড়ায় অংশ নেওয়াদের অনেকের বয়স এতোটাই বেশি যে তাদের পক্ষে সেনাবাহিনীর দেওয়া চুক্তিতে সই করা সম্ভব হচ্ছেনা। তা সত্ত্বেও সামরিক প্রশিক্ষকরা তাদের ছাড় দিচ্ছেন না।
ভাসিল নাজারভ নামের ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার মনে হয়না রাশিয়া এখনই ইউক্রেনকে হামলা করবে। তবে আমি পশ্চিমাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ তারা আমাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। যেহেতু প্রথমবার সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছি তাই আমাকে কাঠের তৈরি বন্দুক ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে।’
ভাসিল নাজারভ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করিনা তারা (রাশিয়া) কিয়েভে পৌঁছাতে পারবে। তবে আমাদের (যুদ্ধের) প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি মনে করি পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার হুমকির কারণে ভ্লাদিমির পুতিন অগ্রসর হওয়ার সাহস দেখাবেন না।’
সেরহি কালিনিন নামের ৬৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শত্রুরা আমাদের সীমান্তে অবস্থান করছে। তাই সবাইকে এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।’
সম্প্রচার মাধ্যম প্রিয়মি টিভির উপস্থাপক তারাস বেরেজোভেটস রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন ‘অনিশ্চিত’ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, পুতিন ইউক্রেনকে কখনো স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে মনে করেননি। পুতিন একটি দেশের স্বাধীন চিন্তাকে থামিয়ে দিতে চান। ঠিক সেভাবে যেভাবে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতারা পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে দশকের পর দশক ধরে করে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ‘২০১৪ সালেই আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমরা কোনোভাবেই নিজেদের রাশিয়ার অংশ হিসেবে দেখতে চাইনা।’
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বা ন্যাটোতে যোগদানের কোন সুযোগ না থাকলেও আমাদের লক্ষ্য পশ্চিমা সভ্যতার অংশ হওয়া। অর্থাৎ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।’