জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, সিলেট:
সিলেটের বিশ্বনাথের কারিকোনা গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৩) নামের এক যুবক গ্রেপ্তার হয়ে লিবিয়ার জেলে বন্দি রয়েছেন। ছেলের বন্দি থাকার খবর পেয়ে তাকে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে তার মা নাছিমা বেগম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রাণালয়ের মাধ্যমে সেখানকার লিবিয়া দূতাবাসে চিটি পাঠি পাঠিয়েছেন।
কিন্তু তারপরও দেশে ফেরা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তার পরিবার। একইভাবে নিরাশ বন্দিশালায় থাকা রবিউলও। সম্প্রতি চিরকুট লিখে সিলেটের হবিগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ব্যারিষ্টার সায়েদুল হক সুমন’র সহযোগীতা চেয়েছেন রবিউল।
গত ১০দিন আগে সে তার বাবাকে একটি চিরকুট লিখে +২১৮৯৩-০৭৪৭৪৬৩ এই নাম্বার থেকে তার মায়ের ০১৭৩৮-৮২৩৩৮৫ নাম্বারের মুঠোফোনের ইমু-তে পাঠিয়েছে। তাতে সে লিখেছে, ‘বাবা আমি রবিউল, আমি ত্রিপুলি মাতার জেলে আছি। আমার সাথে আরও ৬০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। সবাই অনেক কষ্টে আছি। এখানে বেশিদিন থাকলে এমনি মরে যাব। এখান থেকে আমাদের দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা কর। এখান থেকে আমাদের দেশে নিয়ে যেতে পারবে চুনারুঘাটের এমপি ব্যারিষ্টার সুমন ভাই। যত তাড়াতাড়ি পার সুমন ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ কর, কথা বল। সুমন ভাই যদি চায় আমাদের ৬০টা প্রাণ বাঁচাতে পারে। আর তা না হলে পুলিশ আমাদেরকে মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দিবে। সুমন ভাই আপনি আমাদের বাঁচান। আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন ব্যক্তি নাই। ‘আপনি আমাদের শেষ ভরসা’।
সরেজমিন রবিউলের বাসায় গেলে (উপজেলা পরিষদের কোয়াটারে) কথা হয় তার মা নাছিমা বেগমের সঙ্গে। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, তিনি তার ছেলেকে লিবিয়ার জেল থেকে উদ্ধার করে আনতে চান। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি ব্যারিষ্টার সায়েদুল হক সুমনের সহায়তা চান।
নাছিমা বেগম জানান, তার স্বামী সিরাজুল হক উপজেলা চেয়ার্যমান অফিসের অফিস সহায়ক। টানাটানির সংসার। যেকারণে বড় ছেলে রবিউলকে ধার-দেনা করে উন্নত দেশে পাঠাতে মনস্থ করেন তারা। এরপর ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই বিমান যোগে প্রথমে দুবাই পাঠান। সেখানে লিবিয়ার অধিবাসি জনৈক আব্দুর রহমানের সঙ্গে ১৫ আগস্ট লিবিয়া পাড়ি জমান রবিউল।
এরপর সেখানে (লিবিয়ায়) ৬মাস চাকরিও করেন। পবর্তিতে লিবিয়া থেকে ইউরোপে যেতে চাইলে বাংলাদেশি আহসান খান নামের এক দালালের কাছে রবিউলকে তুলে দেন লিবিয়ার দালাল আব্দুর রহমান। আহসান রবিউলের কাছে ৩লাখ টাকা দেওয়ার দাবি করে। আর টাকা না পেলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। রবিউল কৌশলে বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। ছেলেকে বাচাঁতে রবিউলের মা নাছিমা বেগম প্রথমে ২লাখ টাকা পাঠান। এতে দালাল আহসান সন্তুষ্ট না হয়ে রবিউলকে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেন। তরপর চলতি ২০২৪সালের ১২জুন লিবিয়ার বেলকাজি নামক স্থানে রবিউলসহ ৬০ বাংলাদেশি ধরা পড়েন। এরপর তাদের লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি মাতার জেলে পাঠানো হয় তাদের। সেখানে চরম নির্যাতনের শিকার হন রবিউলসহ বন্দি ৬০ বাংলাদেশি।
এদিকে ছেলের জীবন বাঁচাতে মা নাছিমা বেগম গত ২৫জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কীত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের নিকট ছেলেক মুক্তির জন্যে আবেদন করেন। ড. মোমেন বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রবাসি কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর বরাবরে প্রেরণ করেন। তারপর গত ৪ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বন্দি রবিউলকে ফেরত আনতে লিবিয়া দূতাবাসে চিটি পাঠায়।
এ-প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সিলেট-২ আসনের এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী এ-প্রতিবেদককে বলেন, কেবল রবিউল নয়, বন্দি থাকা সকল বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে কাজ করছে।