চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও ৩ বছর যাবত বাগান মালীর দখলে সরকারি কোয়ার্টার: মূল হােতা বনপ্রহরী আহমদ আলী
কুলাউড়া প্রতিনিধি :
কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর রেঞ্জ কর্মচারী বাগান মালী আকবর আলী জুড়ী রেঞ্জে চাকুরী থেকে অবসর নিলেও কুলাউড়ার গাজীপুরের একটি সরকারি কোয়ার্টার এখনও তার দখলে রয়েছে। গাজীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে। তবুও আকবর আলীর টনক নড়ছে না। তার খুঁটির জোর নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকবর আলীর গ্রামের বাড়ী উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পাবই গ্রামে। তিনি দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর গাজীপুর রেঞ্জে বাগান মালী পদে চাকুরী করেছেন। সর্বশেষ তিনি জুড়ী রেঞ্জে ছিলেন এবং সেখান থেকেই অবসর নেন। গাজীপুর রেঞ্জে চাকুরীকালীন সময় অফিসের পাশেই জায়গা ক্রয় করে গড়ে তুলেন নিজস্ব একটি বাড়ী।
এদিকে তার ভাই আহমদ আলী ওই রেঞ্জে বন প্রহরী হিসেবে প্রায় আড়াই বছর চাকুরী করেছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের একজন মন্ত্রীর সাথে দুই ভাই গড়ে তুলেন নানা সখ্য। বন বিটের তৎকালীন কর্মচারী আকবর আলী ও বনপ্রহরী আহমদ আলী সরকার দলীয় লোকজনের সাথে আত্মœীয়তার পরিচয়ে বিভিন্ন অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করতেন। তখন ওই অফিসের উর্দ্ধতন কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেতনা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রায় ৩ বছর আগে আকবর আলী চাকুরী থেকে অবসর নিলেও গাজীপুর রেঞ্জে একটি সরকারি কোয়ার্টার এখনও তার দখলে রেখেছেন। ওই কোয়ার্টারে বসবাসের উপযোগি দুটি রুম থাকলেও ক্ষমতার প্রভাবে সেখানে হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগল পালন করছেন তিনি। অথচ বর্তমানে ওই রেঞ্জের ২ জন সহযোগি রেঞ্জার সরকারি কোয়ার্টার থাকা সত্ত্বেও অন্যত্র ভাড়াটিয়া বাসায় থাকছেন।
সরজমিন দেখা গেছে, সরকারি কোয়ার্টার দুটি দিনের বেলা তালাবদ্ধ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, বনপ্রহরী আহমদ আলী তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সরকার দলীয় একজন মন্ত্রীকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এবং এর প্রভাব খাটিয়ে তারই ভাই আকবর আলীকে দিয়ে কোয়ার্টার দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করাতেন। শেষতক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বনপ্রহরী আহমদ আলী ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল গাজীপুর রেঞ্জ থেকে কমলগঞ্জে বদলী হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন সময় আহমদ আলী সরকার দলীয় এক মন্ত্রীর সাথে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বনবিভাগের বিভিন্ন বিটে বেপরোয়া হয়ে অবৈধ টাকা কামিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ভাই আকবর আলীকে দিয়ে বনবিভাগের সরকারি কোয়ার্টার দখলের মূল হোতা আহমদ আলী নিজেই। কেউ কেউ বলছেন, ৫ই আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর তারা দুজনই খোলস পাল্টানো শুরু করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন অভিযোগ আড়াল করতে তারা এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বনপ্রহরী আহমদ আলী বর্তমানে কমলগঞ্জের কামারছড়ায় বিট কর্মকতা হিসেবে রয়েছেন। এর আগে তিনি কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর বিটে কর্মরত ছিলেন। সেখানে বন বিভাগের গাছ ও বাঁশ অবাধে বিক্রির অভিযোগও রয়েছেন তার বিরুদ্ধে। মূলত এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গাজিপুর থেকে কামারছড়ায় বদলি করা হয়।
একই বিটে আমছড়িপুঞ্জির ভেতরে রিজার্ভ ফরেস্টের প্রায় ৫০ একর জমি পান চাষিদের দিয়ে দেন। এই বিটের প্রচুর পরিমান সেগুন গাছ তার ছত্রছায়ায় চোরাকারবারীরা কেটে নিয়ে যায়।
সরকার দলের প্রভাবের কারণে সিনিয়র কর্মকর্তারাও আহমদ আলীর কাছে ছিলেন অসহায়। তিনি একাধারে লেখক, গবেষক ও সরকারি চাকুরীজীবি পরিচয় দিতেন। “আমাদের বঙ্গবন্ধু, আমাদের বাংলাদেশ” নামে একটি বই তিনি লিখেছেন। এই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের তৎক্ষালীন সরকার ও সরকার দলের শীর্ষ কর্তাদের এনে শোডাউনও করেছিলেন।
কিন্তু বিগত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি দেয়ার পর নিজের খোলস পাল্টানো শুরু করেছেন। এখন নিজের দূর্ণীতিকে আড়াল করতে বিএনপির নেতাদের দারে দারে ঘুরছেন।
জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত বাগানমালী আকবর আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এখানকার সরকারি কোয়ার্টার পরিত্যাক্ত থাকায় সাবেক বন কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের পরামর্শে আমি কেবলমাত্র কয়েকটি হাঁস মুরগি এখানে পালন করছি।
গাজীপুর রেঞ্জের সাবেক বনপ্রহরী আহমদ আলী জানান, ওই কোয়ার্টার বসবাসের অনুপযোগি। এখানকার বন কর্মকর্তা বললেই যেকোন সময় আমার ভাই কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।
গাজীপুর রেঞ্জের রেঞ্জার আব্দুল আহাদ জানান, আমি এখানে যোগদানের প্রায় ৫ মাস হয়েছে। আমি জেনেছি এখানকার একটি সরকারি কোয়ার্টার আকবর আলীর দখলে রয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো হুমায়ুন জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।