সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান:
জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ আমদের সকলের। আমরা দেশটাকে ভালবাসি। গড়তে হবে সকলে মিলে ইনশাল্লাহ। অতীতে যেটা হয়েছে সেটার সাক্ষী আমরা। আমরা অতীত নিয়ে পরে থাকতে চাইনা। কামড়া কামড়িও করতে চাইন। তবে যারা মানুষ খুন করেছে তাদরে বিচার অবশ্যই বিচার হতে হবে। তিনি বলেন, যারা গণহত্যা, মানবহত্যার বিচার হতে হবে। যাদেরকে ঘুম করা হয়েছিল এবং এখনও ঘুম করে রাখা হয়েছে এ দু’টি অপরাধের অবশ্যই বিচার হতে হবে। বাকি অপরাধগুলো বিচার আস্তে আস্তে হোক। কিন্তু অগ্রাধিকার দিয়ে এ দু’টির বিচার হওয়া লাগবে। এটা প্রতি শোধ নেওয়ার জন্য নয়, বরং মানব সমাজকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য।
তিনি বলেন, কেউ খুন করলে খুনি হলে তার পরিনতি কি হয় এটা দেখে যেন সবাই দেখে শিক্ষা নেয় এজন্য।
শনিবার (১ ফেব্রæয়ারি) দুপুর ১২ টায় সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আগষ্টের ৩-৪ তারিখ সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। যাদের নাম পরিচয় এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এখনও হাসপাতালে ২২২ জন পঙ্গুত্ব বরণকারী, ৭শ জন দুচোখ হারা, একচোখ হারানো আরও ৫শ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গুম খুন হত্যাকারিদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের একটাই উদ্দেশ্য একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা। এ কাজের জন্য জামায়াত নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। জামায়াতকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দিলে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে সকল গুম, খুনের বিচার হতে হবে। তিনি জামায়াত নেতা কর্মীদেরকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানান।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের সবগুলো অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম, খুন, নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের নেতাদেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের প্রতি প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।
ডা. শফিকুর রহমান জুলাই বিপ্লবে শাহাদাত বরনকারী সকল শহিদদের স্মরণ করে বলেন, যাদের জীবন দানে আমরা মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধার জায়গায় রাখতে হবে। তিনি নিরীহ মানুষের নামে অযথা মামলায় হয়রানি না করার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশটা সকলের। এদেশের সকল নাগরিক,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করবে। কিছু দুষ্ট লোকের জন্য আমাদের সৌহার্দ্য-সম্প্রতি বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবেনা। ৫ আগষ্টের পর জামায়াত নেতাকর্মীরা টানা ১৫ দিন মন্দির-মঠ পাহারা দিয়ে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিয়েছে।
তিনি বলেন, একটি দল এদেশের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যাবহার করে। আবার তাদের দ্বারাই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। সংখ্যালঘুদের উপর এসকল নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধের জন্য আমি জাতিসংঘে চিঠি লিখেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য। তৎকালীন সরকারকেও একই চিঠি লিখেছিলাম। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করবে আওয়ামী লীগ আর দায় চাপাবে জামায়াতের ওপর। এজন্যই তারা তদন্ত করে নাই।
সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তোয়ায়েল আহমদ খানের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াদের কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তর-এর আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান।
সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও জেলা শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল করিমের যৌথ সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন,হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর হযরত মাওলানা কাজী মোখলেছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট শামছুদ্দিন, মুমতাজুল হাসান আবেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির, সিলেট মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি শাহীন আহমদসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।