শীত জেঁকে বসেছে। কাঁপছে সারাদেশ। এসময় স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। একথা বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। তাই তাদের প্রতি সেবাযত্ন ও নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায় অল্প অবহেলাই পরবর্তীতে বড় আফসোসের কারণ হতে পারে। এখানে শীতে বয়স্কদের প্রতি করণীয় উল্লেখ করা হলো।
* উষ্ণ রাখুন
তীব্র শীতে হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি আছে। কেননা অতিরিক্ত শীতে শরীর দ্রুত তাপমাত্রা হারাতে থাকে। শরীর যতটুকু তাপ উৎপাদন করে তার চেয়ে দ্রুত তাপ হারানোকে হাইপোথার্মিয়া বলে। একসময় শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক কমে গিয়ে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে। হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিক চিন্তাভাবনা ও চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এটা ব্যক্তির অজান্তেই বিপজ্জনক পরিণতির কারণ হতে পারে। হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বয়স্কদের। তাই শীতকালে ঠান্ডা বেশি পড়লে বয়স্কদের প্রতি অধিক যত্নবান হতে হবে। তাদেরকে অপ্রয়োজনে বাইরে যেতে অনুৎসাহিত করুন, বিশেষত সকাল ও রাতে। যথাসম্ভব ঘরে রাখতে হবে। তাদের উষ্ণতার জন্য যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করতে হবে। কড়া ঠান্ডার প্রতিক্রিয়ায় তাদের ত্বক, হৃদস্পন্দন ও শ্বাসক্রিয়াতে পরিবর্তন দেখলে হিটারের ব্যবস্থা করতে পারেন।
* হালকা ব্যায়াম করান
শীতকালে ঠান্ডা বেশি পড়লে বয়স্করা একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তারা বিছানা ছেড়ে ওঠতে চান না। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ শুয়ে বা বসে কাটালে বয়স্কদের স্বাস্থ্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন আলস্যে বয়স্কদের কিছু সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও বাড়তে পারে, যেমন- শারীরিক অনমনীয়তা ও ব্যথার সঙ্গে বিষণ্নতা। তাই তাদেরকে দিনের কিছুটা সময় বয়স উপযোগী হালকা ব্যায়ামে ব্যস্ত রাখুন। গবেষণায় দেখা গেছে- শরীরচর্চাতে হৃদস্পন্দনের হার বাড়ে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে, মেজাজ ভালো হয়, অবসাদ দূর হয় এবং শারীরিক অনমনীয়তা ও ব্যথা কমে। শারীরিক সক্রিয়তায় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায় এবং ত্বক সুস্থ থাকে।
* পানি পান করান
কড়া শীতে তৃষ্ণা অনুভব না করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর ফলে শরীরের জন্য যতটুকু পানি প্রয়োজন তা যোগাতে আমরা তৎপর হই না। কিন্তু পর্যাপ্ত পানির অভাবে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হতে পারে।উদাহরণস্বরূপ, নিয়মিত মলত্যাগের চাপ আসে না তথা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই ঠান্ডা আবহাওয়ায় বয়স্কদেরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। কক্ষ তাপমাত্রার পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি পান করান। গরম তরল জাতীয় খাবারও খাওয়াতে পারেন, যেমন- স্যূপ।
* ত্বকের যত্ন নিন
কড়া শীতের ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর হয়ে যায়। ত্বকের শুষ্কতা, চুলকানি ও আঁশ বেড়ে যায়। তাই ত্বককে সজীব, কোমল ও সুস্থ রাখতে কিছু স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহারের প্রয়োজন আছে। এই বিষয়ে বয়স্করা অবহেলিত হয়ে থাকে। আর নয় অবহেলা, তাদের ত্বকে অন্তত পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা অলিভ অয়েল অথবা সরিষার তেল ব্যবহার করুন। বয়স্কদের ত্বকের পরিপূর্ণ যত্ন নিতে ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। তিনি কিছু কার্যকরী প্রোডাক্টস সাজেস্ট করতে পারেন, যা বয়স্কদের ত্বকে ব্যবহার করতে ভুলবেন না। বয়স্করা ঘনঘন ত্বক চুলকালে অথবা কোনো চর্মরোগ লক্ষ্য করলে চিকিৎসক দেখাতে দেরি করবেন না।
* গোসল করান
কড়া শীতে ভয়ানক পরিণতির আশঙ্কায় বয়স্কদেরকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ গোসল না করিয়ে রাখবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকের সংক্রমণ ও চর্মরোগের ঝুঁকি কমাতে বয়স্কদেরকে সপ্তাহে ২ বার গোসল করানো উচিত। গোসলের পূর্বে ৪/৫ মিনিট ওয়ার্ম আপ এক্সারসাইজ তথা হাত-পা মালিশ করা ভালো। ওয়াশরুমে নিয়ে একটা কাঠের চেয়ারে বসিয়ে কুসুম গরম পানিতে গোসল করাতে হবে। প্রথমে মাথায় পানি ঢালবেন না, কারণ রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। শরীরের অন্যান্য অংশ ধোয়ার পর চুলকে ভেজান। গোসল করানোতে ১৫ মিনিটের বেশি সময় নেবেন না। গরম পানিতে গোসলের পর ত্বক দ্রুত শুকিয়ে যায়। এটা একজিমা বা অন্যকোনো চর্ম সমস্যাকে চেতিয়ে তুলতে পারে। তাই ত্বকের শুষ্কতা এড়াতে শরীর মোছার পরপরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।