রিয়াদ আহাদ : ব্র্রিটেনে উপমহাদেশীয় ক্বারী শিল্পে বাঙালীর অবদান সর্বাগ্রে এটা সর্বজন স্বীকৃত। অথচ অধিকাংশ রেষ্টুরেন্টগুলোর নামই ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট আর এই শিল্পে বাংলাদেশী পন্যের ব্যবহারও একেবারেই নেই বললেই চলে। রেষ্টুরেন্টগুলোতে বাংলাদেশী নানা পণ্যের ব্যবহারে আগ্রহী করতে এবং মুলধারায় রেষ্টুরেন্টগুলোকে বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট হিসেবে তুলে ধরে এর ব্যবসার প্রসার ও প্রচার ঘঠাতে বিবিসির ক্বারী এওয়ার্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশী সেলিব্রেটি শেফ আবুল এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি ব্রিটেনের নানা শহরে থাকা বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টগুলো ভিসিট করে সে সবের প্রমোট করার জন্য একটি অনুষ্টান তৈরী করে Chef Abul’s নামের ইউটিউভসহ সোসাল বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাঁর শ্রম মেধা মনন ও পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে করোনাকালীন মহাসংকটে পতিত ক্বারী শিল্পের উন্নতি সাধনে তিনি এই উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে বাংলা কাগজকে জানিয়েছেন।
আবুল জানান, তিনি যে পরিচিতি পেয়ে আজ শেলিব্রেটি শেফ হিসেবে নানা স্থানে সম্মানিত হচ্ছেন তার নেপথ্যে ক্বারী শিল্প আর বৃটেনের এই ক্বারি শিল্পের পুরোধাই হচ্ছেন বাঙালীরা। মূলতঃ এই অনুধাবন থেকে কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতায় শেফ আবুল বাঙালী রেষ্টুরেন্টগুলোর ক্বারী শিল্পকে তুলে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন,ক্বারী শিল্পে আমাদের বাঙালীরা অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে আর নিয়মিতই তারা মেধা মনন আর একাগ্রচিত্ততায় নতুন নতুন সুস্বাদু খাদ্য পরিবেশন করে যাচ্ছে ; প্রতিটি রেষ্টুরেন্টেই তাদের স্ব-স্ব বিশেষ খাদ্য রয়েছে। অথচ সেগুলোর প্রচার প্রসার সেরকম হচ্ছে না। আমাদের এই সৃষ্টিগুলো যদি আমরা প্রচার প্রসার না করি অন্যরা যেচে এসে তা করবে না বলেন, শেফ আবুল হোসেন। সে কারণেই শেফ আবুল ছুটে বেড়াচ্ছেন বৃটেনের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত। আর তারঁ এই দুরন্ত ছুটে চলায় সঙ্গে নিচ্ছেন তাঁর কন্যা মানহাকেও,যাতে নতুন প্রজন্মের বাঙালীরা আমাদের ঐতিহ্যগত এই শিল্পের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে অন্ততঃ একটি প্লাটফরম তৈরী করে আমাদের নিজস্বতা-স্বকীয়তা তুলে ধরে বাঙালীদের এই শিল্পটি নুন্যতম লাভবান হলেই তাঁর এই ছুটে চলা স্বার্থক হবে বলে মনে করেন এই শেলিব্রটি শেফ।
সুস্বাদু নানা স্বাদ আর সাজের খাবার প্রস্তুুত আর প্রর্দশন করে বিবিসিসহ বিভিন্ন এওয়ার্ড ও নানা পুরষ্কারপ্রাপ্ত সেলিব্রেটি শেফ আবুল জানান, তিনি বাংলাদেশী বড় কাতলা মাছ দিয়ে বিশেষ একটি ক্বারী তৈরী করেছেন এবং বাংলাদেশী মাছ দিয়েও যে ক্বারী তৈরী করে ভোজন রসিক গ্রাহকদের বাহবা পাওয়া যায় সেটা প্রমাণ করেছেন। তাঁর এসব কর্মকান্ডে এখন অনেকে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বাংলাদেশী মাছ দিয়ে ক্বারী তৈরী করার বিষয়ে উৎসাহিত হচ্ছেন এবং গ্রাহকদেরও ভিন্নমাত্রার স্বাদ দিয়ে ব্যবসায়কিভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া গ্রাহকরা বিশেষ স্বাদ পাওয়ায় বাংলাদেশী মাছ ও পণ্যের বিষয়ে আগ্রহীও হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,গ্রাহকরা জানতে চাইলে আমি তাদেরকে বলি, এগুলো কিনতে বাংলাদেশ সোপে যেতে হবে এবং এর ফলে বাংলাদেশী পণ্যেরও প্রচার-প্রচারনা ঘঠছে। উদাহরণ স্বরুপ তিনি বলেন,বাংলাদেশী জলপাই দিয়ে তৈরী করা অলিভ চিকেনকে ইন্ডিয়ান অলিভ বলে চালানো হচ্ছে অথচ সেগুলোকে ইন্ডিয়ান অলিভ না বলে বাংলাদেশী জলপাই বললে তো আমাদেরই লাভ।
তার পুরো পরিকল্পনায় বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট এবং দেশীয় রেসিপিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শেফ আবুল বলেন, “ঈযবভ অনঁষ’ং ‘‘ নামের এই ইউটিউভ চ্যানেলের মাধ্যমে আমি প্রমাণ করার চেষ্টা করছি দেশীয় পণ্য এবং রেসিপি দিয়েও ক্বারি শিল্প পরিচালনা করা সম্ভব। পাশাপাশি এই “ঈযবভ অনঁষ’ং ‘‘ ইউটিউভ চ্যানেল দেখলে নিয়মিত ট্যুরে যাওয়া বাঙালীরা ব্রিটেনের কোন শহরে,কোথায় বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেষ্টুরেন্ট রয়েছে বিশেষ করে হালাল খাবারের জন্য বিড়ম্বনায় পড়বেন না। ক্বারি শিল্প নিয়ে তার বিভিন্ন কর্মকান্ড মুলধারার মিডিয়ায় প্রায় নিয়মিতই প্রচার হয়। বিশেষ করে বিবিসি ক্বারী এওয়ার্ড জেতার পর তাঁকে নিয়ে বিবিসি বিভিন্ন রেষ্টুরেন্ট ভিসিট করে কয়েকটি অনুষ্টান করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো এবং সেই পরিকল্পনা থেকেই “Chef Abul’s ইউটিউভ চ্যানেল করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেনের অনেক অজানা অচেনা স্থানেও বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টে রয়েছে, রয়েছে সে সব রেষ্টুরেন্টের স্ব-স্ব ভিন্নমাত্রার রেসিপি।
প্রয়োজনে তাঁর সাথে যোগযোগ করলে তিনি তাঁর পুরো টিমকে নিয়ে সরাসরি সেই রেষ্টুরেন্ট ভিসিট করবেন এবং সেই রেষ্টুরেন্টের সবকিছু প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করবেন উল্লেখ করে শেফ আবুল জানান,হাজার হাজার রেষ্টুরেন্টের মধ্যে সবগুলোকে তাঁর পক্ষে হয়তো কভার করা সম্ভব নয় ; তবে তিনি তাঁর সর্ব্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছেন বাংলাদেশীদের এই ক্বারী শিল্পকে সর্বাগ্রে তুলে ধরতে। ওয়েলসের কয়েকটি বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টের পরিচালনার পাশাপাশি সেলিব্রেটি এই শেফ বর্তমানে বার্মিংহামের নিকটবর্তী শহর ওয়ালসলে স্থায়ীভাবে বসবাস করে লাল হাভেলী নামে তাঁর মালিকানাধীন একটি রেষ্টুরেন্ট ও বানকুয়েটিং হল পরিচালনা করছেন। লাল হাভেলী রেষ্টুরেন্টে তাঁর উদ্ভাবিত আবুলস তাওয়া ডিশটি ইতিমধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও গ্রাহকেদর কাছে প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছে। তাঁর সাথে যোগাযোগের টেলিফোন নাম্বার হলো – ০৭৯৫৬৫১৫১০৩।