ঢাকায় না লন্ডনে, কোথায় মারা গেলেন পলাতক বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী? এ নিয়েই আলোচনা চলছে দেশের রাজনৈতিক মহলে। একই আলোচনা চলছে লন্ডন এবং সিলেটেও। হারিছ চৌধুরীর পারিবারিক সূত্র জানায়, চার মাস আগে তার মৃত্যু হলেও এত দিন বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। তবে ওয়ারিশ সনদ ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বেহাত হওয়া ঠেকাতে মৃত্যুর খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
একই সূত্র জানায়, এক-এগারোর সময় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে হারিছ চৌধুরী চলে যান আসামের করিমগঞ্জে নানাবাড়িতে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরে এসে আর বিদেশে যাননি। তবে ভারত, ইরান, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকার খবর প্রচার করা হয়। গতকাল মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার পর লন্ডন থেকে তার পরিবারের একাধিক সূত্র জানান, উন্নত বিশ্বে একটি কুকুর বা বিড়াল মারা গেলেও তার ডেথ সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করতে হয়। কিন্তু হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন এমন কোনো প্রমাণ কারও কাছেই নেই। সূত্রটির দাবি, হারিছ চৌধুরী ঢাকায়ই মারা গেছেন। তার মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে মারা যান হারিছ চৌধুরীর আপন ছোট ভাই সেলিম চৌধুরী। সেলিম চৌধুরীর বিষয়টি তখন জানানো হলেও সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার চাপ আসতে পারে এ ভয়ে তখন গোপন করা হয় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর। লন্ডনের ওই সূত্রটির দাবি, লন্ডনে কারও মৃত্যুর পর দাফন বা দাহ করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে মৃত্যুসনদ প্রয়োজন হয়। তবে বাংলাদেশে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কাউকে যে কোনো পরিচয়ে যে কোনো কবরস্থানে দাফন করা সম্ভব উল্লেখ করে ঢাকার কোনো কবরস্থানেই হারিছ চৌধুরীকে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি সূত্রটির। এ সূত্রের দাবি, এখন ওয়ারিশ সনদসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট ঠিক করতেই চার মাস পর এসে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে হারিছ চৌধুরী ব্যাপক আলোচিত ছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যাপক ক্ষমতাবানও ছিলেন তিনি। এক-এগারোর সময় একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডে তার নাম উঠে আসে। এর পরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তখন থেকে শুধু পরিবারের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবার সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন হারিছ চৌধুরী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর সাত বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায়ও আসামি হারিছ চৌধুরী।