৭২১ দিন পর শের-ই-বাংলায় মেক্সিকান ওয়েব, ডিজের ‘বাংলাদেশ’ বলে চিৎকার আর ২৫ হাজার দর্শকের উন্মাতাল গ্যালারির উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। জুজু দূর করে আফগানিস্তানকে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারানোর নায়কও তিনি।
মিরপুরের সবুজ গালিচায় দেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা সকিব আল হাসান, ভরসার পাত্র হয়ে ওঠা লিটন দাস কিংবা মহামূল্যবান মাহমুদউল্লাহ থাকার পরও গ্যালারিতে ‘নাসুম নাসুম’ স্লোগান উঠবে, শোরগোল হবে বাঁহাতি স্পিনারকে নিয়ে- তা কেউ কি কল্পনা করতে পেরেছিল! বৃহস্পতিবার সেই দিনটি দেখেই ফেললেন নাসুম।
অবশ্য ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয়ের ভিত তো গড়ে দিয়েছিলেন লিটন। ব্যাটিংয়ে তার ৪৪ বলে ৬০ রানে ১৫৫ রানের মাঝারি মানের স্কোর পায়। অবশ্য মিরপুরের উইকেটে এই স্কোরকে মাঝারি মানের বলা যাবে না। গড় রানের থেকেও যে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ!
বোলিংয়ে নাসুম শুরুতেই এমন ধাক্কা দিলেন যে আফগানিস্তান কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারল না। সবকটি উইকেট হারিয়ে তারা অলআউট ৯৪ রানে। বাংলাদেশ জিতে গেল ৬১ রানের বিশাল ব্যবধানে। অবশ্য তাদেরকে ৭২ রানে অলআউটের রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের, সেটা অবশ্য ২০১৪ সালে। এরপর তাদের খেলার ধরন পাল্টে গেছে পুরোটাই। নিজেদের দিনে তারা অপ্রতিরোধ্য। সেজন্য বাংলাদেশ শিবিরে ভয় ছিল। কিন্তু মাঠে মাহমুদউল্লাহর দল স্রেফ উড়িয়ে দিল অতিথিদের।
৪ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন নাসুম। টানা ২৪ বলের স্পেলে ১৭টিই ডট বল! প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের স্বাদও পেয়ে যেতে পারতেন। মোহাম্মদ নবীকে প্যাডে আঘাত করে আম্পায়ার মাসুদুর রহমানের থেকে সাড়া পেয়ে যান। পাঁচের আনন্দে ‘পুষ্পা ড্যান্সও’ করেছিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে আফগান অধিনায়ক বেঁচে যান।
ম্যাচটা বাঁচাতে পারেননি নবী। পঞ্চম উইকেটে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে ৩৭ রানের জুটি গড়ে দলকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তোলেন। আরেক বাঁহাতি স্পিনার সাকিব বোলিংয়ে এসে ভাঙেন তাদের প্রতিরোধ। সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ কভারে নবী ক্যাচ দেন ১৬ রানে। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার নাজিবুল্লাহ। শুরুতে হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের ক্যাচ ছাড়া অভিষিক্ত মুনিম এবার কোনো ভুল করেননি। সর্বোচ্চ ২৭ রান করা নাজিবুল্লাহ ফিরলে আফগানিস্তানের লড়াই থেমে যায়। পরের ব্যাটসম্যানরা পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন মাত্র। তবে নাসুমের বিস্ময়কর বোলিংয়ের পর শরিফুলের ২৯ রানে ৩ উইকেট যেন ছায়া হয়ে ছিল।
তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ভুলে ভরা। নাঈম ও মুনিমকে ওপেনিংয়ে পাঠায় টিম ম্যানেজমেন্ট। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলে দারুণ এক কভার ড্রাইভে অভিষিক্ত মুনিম রানের খাতা খোলেন। কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা নাঈম নিষ্প্রভ হয়ে ছিলেন। ফজলহক ফারুকির ইয়র্কারের কোনো উত্তরই ছিল না ৫ বলে ২ রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। মুনিম পরবর্তীতে মুজিবকে টানা দুই চার মেরেছিলেন। কিন্তু প্রথমবারের মতো নামা এই ব্যাটসম্যান পারেননি ইনিংস বড় করতে। রশিদ খানকে স্লগ করতে গিয়ে ১৭ রানে থেমে যান।
তিনে নামা লিটন শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। উইকেটের চারিপাশে মাধুর্যতা ছড়িয়ে শট খেলেছেন। প্রতিপক্ষের শক্তির জায়গায় আক্রমণ করেছেন। স্পিনের বিপক্ষে পায়ের ব্যবহার ছিল দুর্দান্ত। তাতে রানও আসছিল অনায়াসে। ৪ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ৬০ রানের ইনিংসটি যেন তার আরেকটি ক্যানভাসে ছড়ানো তুলির আঁচড়। মাহমুদউল্লাহ এক ছক্কায় ১০ রানের সাজানো ইনিংসটি বড় করতে পারেনি।
সাকিবও পথ ভুলে আটকে যান ৫ রানে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন লিটন ও আফিফ। তাদের ৪৬ রানের জুটিই বাংলাদেশের পুঁজি সমৃদ্ধ করে। আফিফ ২৫ রানে ফিরে গেলেও তার ইনিংসটি ছিল একেবারেই সময়োপযোগী। শেষ দিকে ইয়াসির, মেহেদীরা স্কোর বাড়াতে না পারলেও তা জয়ে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।
বাংলাদেশের ইনিংসে আজ চার-ছক্কা ফুরঝুরি ছোটেনি। মাত্র ১১টি চার ও ৩টি ছক্কা এসেছে গোটা ইনিংসে। ব্যাটসম্যানরা রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ভরসা রেখেছিলেন। বৃত্তের ভেতর থেকে দ্রুত ১ রান বের করেছেন। সীমানার কাছাকাছি বল পাঠিয়ে ২ রান নিয়েছেন অনায়াসে। তাতে প্রতিপক্ষের ওপর যেমন চাপ তৈরি করেছে। নিজেদের ম্যাচ পরিকল্পনাকেও সফল প্রমাণিত করেছেন।
৬১ রানের বিশাল জয় টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশের। পাপুয়া নিউ গিনিকে কিছুদিন আগে বিশ্বকাপে ৮৪ রানে ও আয়ারল্যান্ডকে ৭১ রানে হারানোর রেকর্ড আছে। তবে ৬১ রানের এই জয়কে একটু ভিন্নভাবেই দেখতে হবে। কারণটা অজানা থাকার কথা নয়, ৮ পরাজয়ের গেরো ছোটাল যে মাহমুদউল্লাহ অ্যান্ড কোং!