অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদ ছিলেন প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক মননশীল লেখক। তাঁর একটি প্রবচন ছিল–রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিল না, দরকার ছিল বাংলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে, রবীন্দ্রনাথ কত বড় কবি;আর মুসলমানরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি হিসাবে । এই কথাটা এখানে তুলে ধরার অর্থ হলো এই পুরো লিখাটি পড়লে বোধগম্য হবে সকল পাঠকেরই।
সম্প্রতি বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কমিটি বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০বছর পূর্তি এবং বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার দশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক বিজয় মেলা’র (২০২১)আয়োজন করে। বিজয় মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সম্মাননা প্রদান। প্রবাসী সংগঠকদের এই সম্মাননার হয়তো প্রয়োজন ছিল না,কিন্তু প্রয়োজন ছিল স্বীকৃতির। যা প্রমান করবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বার্মিংহামবাসীর অবদান বা কৃতিত্ব। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াসের জন্য কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কমিটি ও বার্মিংহাম বাংলাদেশ মাল্টিপারপাস সেন্টারকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ মাল্টিপারপাস সেন্টারের চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কমিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাসির আহমেদ, বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুল হাসান চুনু এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল চৌধূরী সুমনকে ।
ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের প্রশ্নে বার্মিংহাম বাসীর অবদান নিয়ে একটু আলোচনা করলেই সহজে অনেক কিছু বেড়িয়ে আসবে। ইতিহাস দিকে পর্যালোচনায় দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। তার জন্য অনেক দেন-দরবার ও লড়াই করতে হয়। এই লড়াইয়ে জন্য প্রয়োজন একজন অসংবাদিত নেতার, যাঁর সঠিক নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে আসে। বাঙালী জাতীর এ রকম একজন নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫২’র ভাষা আন্দোলন,৬২’র শিক্ষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৬৬’র ৬দফা আন্দোলনের এক পর্যায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করা হয়। সংবাদটি খুব দ্রæত সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়। এ সংবাদটি বৃটেন আসার সাথে সাথেই বার্মিংহামের ডঃ তজাম্মেল টনি হক এমবিইসহ লন্ডনে বসবাসরত ইস্ট পাকিস্থান হাউসের নেতৃবৃন্দ “শেখ মুজিব ডিফেন্স ফান্ড” গঠন করে শেখ মুজিবকে মুক্ত করার জন্য। সেজন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা পয়সা সংগ্রহ করা হয়। একই সময় বার্মিংহামে বসবাসরত স্কুল শিক্ষক ডঃ তজাম্মেল টনি হক এমবিই শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত পূর্ব পাকিস্তানিদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করার জন্য শিফটের সময় অনুযায়ী কখনো সকাল, কখনো বিকাল,কখনো রাতে কারখানাগুলোর গেইটে ধর্ণা দিতেন। এক পর্যায়ে টনি হক ইস্ট পাকিস্থান হাউসের নেতৃবৃন্দ তথা বিশেষ করে জাকারিয়া খান চৌধূরী (হবিগঞ্জ),আব্দুল মান্নান ছানু মিয়া (নবীগঞ্জ)সহ সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শেখ মুজিবের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য স্যার টমাস উইলিয়াম কিউসিকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। যার ফলশ্রæতিতে ৬৯’র ফেব্রæয়ারীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল মুক্ত হন।
এদিকে সত্তরের নির্বাচনের পর পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর নানান টালবাহানা দেখে তৎকালীন সময়ে বার্মিংহামে বসবাসরত পূর্ব পাকিস্তানের কিছু কিছু বিপ্লবী নেতা বিশ্বাস করতেন নিয়মতান্ত্রিক পথে স্বাধীনতা পাওয়া সম্ভব নয়;প্রয়োজন সশস্ত্র বিপ্লবের। এ রকম একজন অত্যন্ত সাহসী নেতা ছিলেন বার্মিংহামের আব্দুস সবুর চৌধূরী। তিনি সে সময় পাকিস্তানী ব্যাংকের বাঙালী অফিসার নরসিংদীর আজিজুল হক ভূঁইয়াসহ আরো অনেককে নিয়ে গোপন বৈঠকের গঠন করেন “ইস্ট পাকিস্থান লিবারেশন ফ্রান্ট”।
শুরতেই ইস্ট পাকিস্থান লিবারেশন ফ্রন্ট আন্ডার গ্রাউন্ড দল হিসেবে থাকলেও ১৯৭০ সালের ২৯ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্থানের বিচ্ছিন্নতার দাবী নিয়ে বার্মিংহামের ডিগবাথ সিভিক হলে এক ওপেন (খোলা) সভা করেন। উক্ত সভায় ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ ছাড়া ও পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালীন ছাত্রনেতা তারিক আলী;এম,কে,জানজুয়া, বশির আওয়াল, কর্নেল এনায়েতুল্লাহ সহ অন্যান্যরা যোগ দেন।
চলবে——।
লেখক ঃ সাব এডিটর.বাংলা কাগজ।