শোক সংবাদ — নুরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২২ | আপডেট: ৫:৪১:পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২২

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সমাজসেবী, লেখক ও সাংবাদিক নুরুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন। গত ১১ জানুয়ারী সন্ধ্যায় তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নূরুল ইসলাম ১৯৩২ সালের ১ জুন সিলেট সদর থানার সদরখলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট এমসি কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৫২-৫৩ সালে কলেজ ইউনিয়নের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন। ঢাকায় ভাষা আন্দোলনরত ছাত্রদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন গোবিন্দপার্কে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐতিহাসিক প্রথম সভায় তিনি সভাপতিত্ব করার বিরল গৌরবের অধিকারী। ১৯৫৩-৫৪ সালে তিনি সিলেট মহকুমা (বর্তমান সিলেট জেলা) ছাত্র ইউনিয়নের (ইপসু) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। নুরুল ইসলাম ১৯৬৫ সালের ৬ নভেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাতে আসেন। লন্ডনে তিনি ১৯৫৮ সালের আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ১৯৬৩ সালে ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অব পাকিস্থান অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রেট ব্রিটেন’ গঠনের অন্যতম প্রধান এবং ১৯৬৪ সালে ‘ইস্ট পাকিস্থান হাউস’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণকালীন লন্ডনে ইস্ট পাকিস্থান হাউসকেন্দ্রিক পূর্ব পাকিস্থানকে স্বাধীনতার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। তিনি দেশে ৬-দফা আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, এবং শেষ পর্যন্ত ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভারতে তখন ৪ ও ৫ নং সেক্টরের প্রতিনিধি দেওয়ান ফরিদ গাজীর (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন) একান্ত সচিব ছিলেন।
১৯৭১ সালে তিনি মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে বর্হিবিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি আব্দুস সামাদ আজাদের সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। স্বাধীনতা লাভের পর বৃহত্তর সিলেট জেলাকে পূণর্গঠনের জন্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে সিলেটের সকল পার্লামেন্ট সদস্যকে নিয়ে গঠিত ‘সিলেট জেলা প্রশাসন পরিষদ’-এর সচিব ছিলেন। একইসঙ্গে পাকিস্থান হানাদার বাহিনীর দোসর ঘাতক-দালাল ও রাজাকারদের বিচারের জন্য গঠিত ‘সিলেট জেলা ফ্যাক্ট ফাইটিং কমিটি’র সঙ্গেও দীর্ঘদিন কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রবাসীদের কল্যাণার্থে ‘প্রবাসী বাঙালি কল্যাণ বোর্ড’ গঠিত হলে এটির সচিব হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৭৮ সালে সিলেটে ‘বাংলাদেশ ওভারসিজ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হলে তিনি এটির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যে বাঙালিদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনের পাশাপাশি সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি লন্ডন থেকে প্রকাশিত দেশের ডাক, পাকিস্থান টু-ডে, এবং পাকিস্থান থেকে প্রকাশিত ডন পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে বাংলাদেশ টাইমস এবং সিলেট থেকে প্রকাশিত সিলেট বার্তা পত্রিকার লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ: ইতিহাস: ‘প্রবাসীর কথা’ (ইতিহাস: প্রবাসী পাবালকেশন্স, সিলেট: ১৯৮৯)। ইংরেজি: ‘ঝড়লড়ঁৎহবৎং ঃড় ঝবঃঃবষবৎং: ঞযব ঞধষবং ড়ভ ওসসরমৎধহঃং’ (ইধহমষধ অপধফবসু, উযধশধ (২০১৩)। নূরুল ইসলাম ২০১২ সালে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ লাভ করেন।

আলহাজ্ব নাসির আহমেদের শোক প্রকাশ
মরহুম নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন বার্মিংহাম বাংলাদেশ মাল্টিপারপাস সেন্টারের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নাসির আহমেদ। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বলেন নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে কমিউনিটি সত্যিকার অর্থের একজন জনদরদী সমাজসেবকে হারালো। এই শুন্যতা পোষানোর নয় উল্লেখ করে আলহাজ্ব নাসির আহমেদ বলেন,কমিউনিটির জন্য নুরুল ইসলামের মতো মানুষের নানা কর্মকান্ডেই আজকে প্রবাসীরা অনেক দুর এগুতে পারছে।