জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধে বাঁধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। নদ নদীর পানি বাড়ায় ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধগুলো হুমকির সম্মুখীন হয়ে ফাটল দেখা দেওয়ায় হাওরের আধাপাকা ফসল ঘরে তুলতে কৃষকরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার প্রধান হাওর নলুয়ার হাওরের বেতাউকা গ্রামের পাশে ১৪ নং প্রকল্প রবিবার রাতে মাটি ধসে যায়। সোমবার সকাল থেকে বাঁধটি রক্ষায় কাজ চলছে। একইভাবে নলুয়ার হাওরের ডুমাখালি এলাকার ৮ ও ৯ নং প্রকল্পের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধে রবিবার রাতে ফাটল দেখা দিলে নলুয়ার হাওরে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল হুমকিতে পড়ে। অপরদিকে ওই রাতে সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের ঝিলকার হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিলে কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। পরে স্হানীয় মসজিদের মাইকে বেড়িবাঁধ রক্ষায় আহ্বান জানালে আশপাশ কয়েক গ্রামের গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ এসে বাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন।ভোররাতে সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের তেঘরিয়ার হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ ফাটল দেখা দেয়। এটিও রক্ষা করতে এলাকার লোকজন প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসান। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের প্রচেষ্ঠায় বাঁধ দুটি ঠিকে আছে।
অপরদিকে জগন্নাথপুর পৌর এলাকা শাহপুর বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিলে স্হানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কৃষকরা বাঁধটি সোমবার রক্ষা করতে কাজ করেন।
মীরপুর ইউনিয়নের জামাইকাটা হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিলে এলাকার লোকজন স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে বাঁধটি রক্ষা পায়। এছাড়া রবিবার জগন্নাথপুরের পাটলী ইউনিয়নের আসামপুর গ্রামের হালির হাওর ও পাইলগাঁও ইউনিয়নে রমাপতিপুর গ্রামের গলাখাল হাওরের বোরো ফসল পানি প্রবেশ করেছে। এদুটি ছোট হাওরের ১৩০ হেক্টর আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
নলুয়ার হাওর ব্যষ্টিত চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল জানান,নলুয়ার হাওরের অনেকগুলো ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে। গত দুই দিনে তিন চারটি বাঁধে ফাটল দেখা দিলে কৃষক ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন সংস্কার কাজ চালান।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কমপক্ষে ১০ টি বাঁধ এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে। কাজের মান সন্তোষজনক না হওয়ায় বাঁগুলো ঝুঁকিতে পড়ে।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সহ কৃষি বিভাগের লোকজন বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ সহ ফসল রক্ষায় দিনরাত কাজ করছেন। সব হাওরে ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী বলেন, নলুয়ার হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধ। অপর ফাটল দেখা দেয়া বাঁধগুলো পাউবোর ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ না হলেও আমরা সবগুলো বেড়িবাঁধ রক্ষায় মাঠে কাজ করছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ফাটল ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে । পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঝুঁকি এখনো রয়েছে। তবে ঝুঁকির মধ্যেই বাঁধে বাঁধে আমাদের লড়াই অব্যাহত রেখেছেন।