জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:
মাত্র এক কিলোমিটার নদী খনন করা হলে শতকোটি টাকার বোরো ফসল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। হাওরে প্রয়োজন হবে না ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের। এতে করে বাঁধের কাজে কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এসব কথা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরপারের কৃষকরা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের নিকট তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিমন্ত্রী নলুয়া হাওরের ভুরাখালি গ্রামে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করতে গেলে স্থানীয় কৃষকরা এসব দাবী জানান।
এসময় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক তাঁর সঙ্গে পাউবোর কর্মকর্তাকে নদী খননের বিষয়টি নোট করার জন্য নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে মন্ত্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, আগামীতে হাওরের ফসল রক্ষায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর রক্ষায় ১৪টি নদী খননসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী বন্যার আগেই এর সুফল পাওয়া যাবে। নদী ও খাল খননের মাধ্যমে নাব্যতা বাড়লে বাঁধ উপচে আর পানি হাওরে ঢুকবে না।
হাওরপারের কৃষকরা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর, কলকলিয়া, রানীগঞ্জ , জগন্নাথপুর পৌরসভা ও দিলাইর উপজেলার একাংশের মানুষ জগন্নাথপুরের সর্বৃবৃহ নলুয়া হাওরের বছরের একবার বোরো ফসল চাষাবাদ করে। এই ফসলের ওপরই সারাবছরের সংসার যোগানের ভরসা তাদের। ফসলডুবির ঘটনা ঘটলে বছরজুড়ে অভাব অনটল আর দুঃখ কষ্টে কাটে হাওরের মানুষের।
নলুয়া হাওর ব্যষ্টিত চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের ভুরাখালি গ্রামের ভুরাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, নলুয়া হাওরের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া কামারখালি নদীর ভুরাখালি গ্রামের দক্ষিণ অংশ থেকে দিরাইয়ের হান্দুয়ার বিল পর্যন্ত এ এক কিলোমিটার খনন করা হলে নলুয়া হাওরে ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রয়োজন হবে না। কারণ নদীতে পানি ধারণ ক্ষমতা থাকবে। এতে করে নলুয়া হাওরের শতকোটি টাকার বোরো ফসল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
স্থানীয় ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রনধীর কান্ত দাস নান্টু বলেন, জগন্নাথপুর ও দিরাই এ দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে কামারখালী নদী বয়ে গেছে। নদীটি নব্যতা হারিয়ে ফেলায় পানির ধারণ ক্ষমতা করেছে। এ নদীর ভুরাখালি থেকে দিরাইয়ের হালেয়ার হান্দুয়া পর্যন্ত খনন করা গেলেও দুই উপজেলার মানুষ কৃষকরা উপকৃত হবেন। নদীর দুইপাশেই দুইটি বড় হাওর রয়েছে।
চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কৃষক নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকরা নদী খনেন জন্য দাবী জানিয়েছে আসছিলেন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী হাওর পরিদর্শন এলে আমরা বিষয়টি তাঁর নজরে এনেছি। এবং জোরদাবী জানিয়েছে, ভুরাখালি থেকে হান্দুয়া পর্যন্ত খননকাজের জন্য। খনন ব্যতিত বন্যার হাত থেকে হাওরের ফসলরক্ষা অসম্ভব।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, জেলার অন্যতম হাওর হচ্ছে নলুয়ার হাওর। এ হাওরে জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার লাখো কৃষক পরিবার প্রতিবছর বোরো আবাদ করে আসছেন। কিন্তুু পানির চাপ বাড়লেই ফসলহারানোর দুশ্চিতায় কাটে কৃষকের। এরইমধ্যে কয়েকবার ফসলডুবির ঘটনা ঘটেছে। কামারখালি নদীটি খনন হলে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধের প্রয়োজন হবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর উপজেলা মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী জানান, মন্ত্রীমহোদয়ের নিকট স্থানীয় কৃষকরা নদী খননের দাবী জানিয়েছেন। এটি খনন হলে হাওরপারের মানুষ উপকৃত হবে। এছাড়া বেড়িবাঁধের ঝুঁকি কমবে।