মহান রমজান মাসের আজ ২৬ তারিখ। আজকের সূর্যাস্তের পর শুরু হবে মহিমান্বিত রজনী শবে কদর। কদর আরবি শব্দ। এর দুটি অর্থ হতে পারে। ভাগ্য ও মর্যাদা। শবে কদর নামের সঙ্গে উভয় অর্থই মানানসই।
সূরা দুখানের ৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস ও ইবনে উমরসহ প্রমুখ সাহাবা ও তাবেয়ীন মত ব্যক্ত করেছেন যে, শবে কদরে আগামী এক বছরের সৃষ্টি সংক্রান্ত সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা লওহে মাহফুজের লেখা অনুসারে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের জানানো হয়। আগামী ভাগ্যবছরে কে কে জন্মগ্রহণ করবে, কে মৃত্যুবরণ করবে, কাকে কী পরিমাণ রিযিক দেওয়া হবে ইত্যাদি ফেরেশতাদের জানানো হয়। এ ব্যাখ্যা অনুসারে শবে কদরের অর্থ করা যায় ভাগ্যরজনী। আবার সূরা কদরে এ রাতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে হাজার মাসের চেয়ে বেশি। এ ব্যাখ্যা অনুসারে শবে কদরের অর্থ করা যায় মহিমান্বিত রজনী।
শবে কদরের ফজিলত বর্ণনা করার জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ‘কদর’ নামে পূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। এ সূরাতে শবে কদরের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। যথা: ১. শবে কদরে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। ২. শবে কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেয়। হাজার মাস সমান ৮৩ বছর ৪ মাস। অনেকের মতে হাজার মাস দ্বারা নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝানো হয়েছে। আবার অনেকের মতে নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝানো হয় নি। বরং অনেক বেশি বুঝানোর জন্য হাজার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের গড় আয়ু যেহেতু ৬০-৭০ বছর সেহেতু বছরে এমন একটি রাত লাভ করা আমাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। একটি রাত ইবাদত করে ৮৩ বছর ৪ মাসেরও অধিক সময় একাধারে ইবাদত করার ছওয়াব পাওয়া যাবে। ৩. শবে কদরে হজরত জিবরাঈলের নেতৃত্বে একদল রহমতের ফেরেশতা সকল কল্যাণ নিয়ে দুনিয়াতে অবতরণ করেন। তারা সারা দুনিয়া বিচরণ করেন। যেখানেই কোনো বান্দা-বান্দীকে ইবাদতে দেখেন, মুনাজাতে রত দেখেন সেখানেই তারা মুনাজাতে শরিক হয়ে যান। ৪. কদরের পূর্ণ রাতই শান্তিময়।
এ রাতের করণীয় বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে নবীজী (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে শবে কদরে জেগে নামাজ পড়বে তার পেছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে (বুখারীঃ২০১৪)।
আরেক হাদীসে নবীজী (স.) হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি এ রাত থেকে বঞ্চিত হবে সে সব প্রকার খায়র ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। বস্তুত, একমাত্র হতভাগা ও দুর্ভাগারাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনবে মাজাহ্ঃ১৬৪৪) মুসলিমের এক হাদীসে দেখা যায়, নবীজী (স.) শবে কদর লাভের আশায় নিজে জাগতেন। পরিবারস্থদের সজাগ করতেন। কোমর বেঁধে ইবাদতে লিপ্ত হতেন।
বিভিন্ন হাদীস সামনে রেখে আলিমগণ শবে কদরে চারটি কাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। যথাঃ ১. এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া ২. নফল নামায পড়া। এ নামাজের আলাদা কোন নিয়ত, সুরা ও নিয়ম নেই। কোরআনের যে কোনো সুরা দিয়ে সাধারণ নফল নামাজের নিয়মেই এ নামাজ পড়া যায় ৩. কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকার করা ৪. দোয়া করা
শবে কদরের নামাজ ও ইবাদত মসজিদেও করা যায়, বাড়িতেও করা যায় তবে বাড়িতে করাই অধিক উত্তম। মসজিদে কোনো তবারকের আয়োজন না করাই যুক্তিসঙ্গত। কেননা, এতে ইবাদতের পরিবেশ ও মসজিদের গাম্ভির্য নষ্ট হয়। ইবাদতের উদ্দেশ্যে আগত মুসল্লীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়।