সম্পাদকীয়: আমাকে ক্ষমা করবেন, স্যার- সাইফুর রহমান কায়েস

প্রকাশিত: ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২২ | আপডেট: ১০:০৩:পূর্বাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২২

সম্পাদকীয়

আমাকে ক্ষমা করবেন, স্যার
সাইফুর রহমান কায়েস

শিক্ষক লাঞ্চনার বিচার না হওয়ায় এবার সকল ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে শিক্ষককে হত্যার মতো পাশবিক ঘটনায় পুরো জাতিই মুষড়ে পড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম মূর্খতারূপ ধারণ করবে। শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে পুরো জাতিই বিধ্বংসিত হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে অগ্রসর প্রজন্মের উচ্ছন্নে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষা জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিন্যাস্ত পরিমার্জিত রূপ। আমরা শুধু স্কুল থেকেই যে শিখি তাই নয়, পরিবার থেকেও শিখি। পরিবারের কাঠামোগত বিন্যাস ধ্বসে পড়েছে, ক্ষয়িত বলেই আমাদের সন্তানেরা পারিবারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। ফলে স্কুলের শিক্ষার সাথে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়ায় তারা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে দিনকে দিন সহিংস আচরণকে রপ্ত করছে। এটা কোনোকালেই কাম্য নয়। জাতিকে বাচাতে, সুন্দর পথের নির্দেশনা দিতে শিক্ষকদেরকে শিক্ষাদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ বহাল রাখতে তাদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
আমরা এমনিতেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমি সকল শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাইছি।
জাতিরাষ্ট্র বিপ্লবের চেতনার বিকাশে স্কুলগুলো যে স্বপ্নের বীজ বুনেছিলো শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষকদের হত্যার মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্নকেও হত্যা করা হয়েছে। তাই আওয়াজ উঠুক। সারাদেশ আজ শিক্ষকদের রক্তে লাল হয়ে গেছে। তাদের রক্ত আজ পদ্মামেঘনাযদুবংশবুড়িগঙ্গাতুরাগবালুযমুনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে গড়িয়ে পড়ছে। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আজ লালে লাল হয়ে গেছে। আমাদের ভেতরে বইছে অশ্রুনীর।
২. কিশোর গ্যাঙের উৎপাত আজ সারাদেশেই। এরা প্রচলিত আইনকে থুরাই কেয়ার করে থাকে। এদের বেপরোয়া আচরণ সমাজের স্থিতাবস্থাকে নাজুক করে তোলেছে। আমরা তাদের হাতে বইয়ের বদলে ডিভাইস, গ্যাজেটস ইত্যাদি তুলে দিয়েছি। ফলে একটা প্রজন্মের বিরাট অংশ বইবিমুখ হয়ে পড়েছে। অল্পবয়সেই এরা পর্ণোগ্রাফির মতো আত্মবিনাসী কর্মকাণ্ডের সাথে একাত্মবোধ করছে। যা তাদের ব্যক্তিগতজীবন ও জীবনাচারে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে তারা উচ্ছৃঙ্খলতার পথকে সঠিক পথ বলে মেনে নিচ্ছে। পরবর্তীতে যেটি তাদেরকে ইভটিজিং’র পথে ধাবিত করে।

পাড়ায় মহল্লায়, হাটে বাজারে পাঠাগারের স্থান দখল করেছিলো ভিসিপির দোকান। আর এখন এসবকে টেক্কা দিয়ে মুঠোফোন এখন সবার হাতে হাতে। গল্পবলা দাদুর বদলে গ্যাজেটসই তাদের ঘুম পাড়ায়, হাসিকান্নার জন্য নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে গেছে। এগুলো তাদের ঘুমের সময়, খেলার সময়, পড়ার সময় কেড়ে নিয়েছে। মনোজাগতিক বিকাশকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। পারিবারিক আড্ডায় এরা যোগ না দিয়ে গ্যাজেটস নিয়ে মেতে উঠে।

এখন সময় এসেছে শিশুদের কাউন্সেলিং’র পাশাপাশি মাবাবাদেরও কাউন্সেলিং করার। প্রতিটি স্কুলে অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তাহলে পরিবার এবং স্কুলের মাঝে যোগসূত্র , মেলবন্ধন তৈরী হবে। আমাদেরকে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে কোনো শর্টলিস্টেড নয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী।

লেখক; প্রধান সম্পাদক
ত্রৈমাসিক শব্দকথা।