মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান :
ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জে দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের চরম সংকট। ভারী বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জির ঢলের পানিতে গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। বন্যায় ৯৮ ভাগ ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়। ভেসে যায় প্রায় চার গবাদিপশু।
জেলা প্রাণি সম্পদ সূত্রে জানাগেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় ৭২ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৫টি গবাদিপশু রয়েছে। এরমধ্যে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি গবাদিপশু বন্যার পানিতে মারা গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ২১২টি গবাদিপশু মারা গেছে। ছাতক উপজেলায় ১৫ হাজার ৭৮২টি। দোয়ারাবাজারে ২১ হাজার ৮৫৫টি। জগন্নাথপুরে ১২ হাজার ৮৫৩টি। জামালগঞ্জে ২৯ হাজার ৩৭৯টি। বিশ^ম্ভপুরে ৮ হাজার ৮৯০টি। দিরাইয়ে ২৯ হাজার ১৪০টি, শাল্লায় ৬ হাজার ৫৫৫টি, তাহিরপুরে ৮ হাজার ৮৩০টি, ধর্মপাশায় ৫ হাজার ৬৬৩টি ও শান্তিগঞ্জে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৬৯টি গবাদিপুশ বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে। একই সঙ্গে ভেসে গেছে ৯শত মেট্রিকটন গোখাদ্য। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় একশ মেট্রিকটন, ছাতকে দেড়শত মেট্রিকটন, দোয়ারাবাজারে ৬০ মেট্রিকটন, জগন্নাথপুরে একশত মেট্রিকটন, জামালগঞ্জে ৬০ মেট্রিকটন, দিরাইয়ে ১২০ মেট্রিকটন, বিশ^ম্ভরপুরে ৩০ মেট্রিকটন, তাহিরপুরে ৬০ মেট্রিকটন, শাল্লায় ৩০ মেট্রিকটন, ধর্মপাশায় ৮০ মেট্রিকটন ও শন্তিগঞ্জে ১১০ মেট্রিকটন গোখাদ্য ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের নতুনপাড়া গ্রামের মুক্তার মিয়া জানান,তার তিনটি অস্টেলিয়ান গাভী ও একটি বাচুর ছিল। এর মধ্যে বন্যার পানিতে দুটি গাবী মারা গেছে। এ দুটি গাভী প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ লিটার দুধ দিত। এখন একটি গাভী ও একটি বাচুর থাকলেও তাদের খাবার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এদুটি গরুকে বাঁচাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি অরো জানান, বন্যার আগে অস্টেলিয়ান দুটি গাভীর দাম উঠেছিল তিন লাখ টাকায়। কিন্তু তিনি বিক্রি করেননি।
একই উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের ললিয়াপুর গ্রামের সুলেমান মিয়া জানান, তার ৮টি গরুর মধ্যে ৫ টি গরু বন্যার পানির ঠান্ডায় মারা গেছে। সঙ্গে গোখাদ্য যা ছিল তা-ও বন্যার পানিতে ভেসেগেছে। এখন তিনটি গরুর খাবার যোগার করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। এ উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের মহসিন মিয়া জানান, তার তিনটি গরু ও চারটি ভেড়া বন্যার পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে।
ছাতকের জাহাঙ্গীর আলম, চৌধুরী জানান, তার তিনটি গরু রয়েছে। গরুগুলিকে বন্যার পানি থেকে বাঁচানো গেলেও এখন গোখাদ্যের অভাবে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ উপজেলার সিংচাপইর ইউনিয়নের জিয়াপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, তার ৫টি গরু রয়েছে। বন্যার কবল থেকে এগুলোকে চাঁচাতে পারলেও ভেসে গেছে গোলার ৩২ মণ ধান ও গোখাদ্য (খড়)। এখন খাবারের অভাবে গরুগুলো তার শুকিয়ে যাচ্ছে। শন্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্বপাগলা ইউনিয়নের চুড়খাই গ্রামের কৃষক আব্দুর রব জানান, তার চারটি গরু ছিল। এরমধ্যে একটি গরু বন্যার পানিতে মারা গেছে। এখন তিনি তিনটি গরুর খাবার নিয়ে খুবই চিন্তিত আছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, বন্যায় এবার জেলার ১১টি উপজেলায় ৯শত মেট্রিকটন গোখাদ্য নষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি মেট্রিকটন গোখাদ্য ৫২ হাজার টাকা হিসেবে ধরলে ৯শত মেট্রিকটন গোখাদ্যের মূল্য দাাঁড়ায় ৪ কোটি ৫৮ হাজার টাকায়। ডা. আসাদুজ্জামান অরো জানান, ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।