জগন্নাথপুর প্রতিনিধি::
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা নারী খুদেজা বিবি। ছেলের চেয়ে মাত্র ১০ মাসের ছোট তিনি। তাঁর জন্ম ১০ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে। আর ছেলের জন্ম ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ । এমন উদ্ভুট তথ্য জাতীয়পত্রে মিলেছে। বয়সের অমিলে বাতিল হয়ে গেছে ওই বৃদ্ধার বয়স্কভাতার কার্ড। ফলে জীবনের শেষ সময়ে এসে ভাতা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আর সংশয়ে কাটছে সময় তাঁর।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ঐয়ারকোনা গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে ঐয়ারকোনা গ্রামের মৃত আব্দুল গনির স্ত্রী মোছা: খুদেজা বয়স্কভাতার কার্ড বরাদ্দ পান। জন্মসনদের মাধ্যমে তৎসময় অনলাইনে ডাটাবেজ ছিল না। প্রায় ১২ বছর ভাতার অর্থ উত্তোলনও করেছেন তিনি। কিন্তু গেল বছর অনলাইনে ডাটাবেজ করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম থাকায় বাতিল হয়ে যায় তাঁর ভাতার কার্ডটি। ফলে বিগত ৬ মাস ধরে বিধবা ওই নারী বয়স্কভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
এদিকে, জাতীয় পরিচয়পত্রে বৃদ্ধা খুদেজা বিবির জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে ১০ নভেম্বর ১৯৭৪।
আর তাঁর একমাত্র ছেলের জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫। সে অনুযায়ী ছেলে মো. আব্দুল মুহিত (প্রতিবন্ধী) তাঁর মায়ের চেয়ে মাত্র দশ মাসের ছোট। জন্মনিবন্ধনে ওই বৃদ্ধার জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে, ১২-০৯-১৯৫৩। সে হিসেবে ওই নারী সময় ৭০ বছর।
অন্যদিকে, বয়সের এমন পার্থক্য সংশোধন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবারটিকে। নানা কাগজপত্র জমা দেওয়ার বেড়াজালে পড়েছেন তারা। যার ফলে বয়স কম-বেশির কারণে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।
বৃদ্ধা খুদেজা বিবি জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের পর বয়স্কভাতার কার্ড পাওয়ার পর ১২ বছর যাবত ভাতার টাকা পেয়েছি। হঠাৎ করে
ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এখন মরার সময় ওষুধের টাকাই পাচ্ছি না।
ওই বৃদ্ধার প্রতিবন্ধী ছেলে আব্দুল মুহিত বলেন, আমার বয়সই ৫০ হয়ে যাচ্ছে। মার বয়স ৭০ এর উপরে হলেও কার্ডে ভুল করে ৪৯ বছর করে দিয়েছে। একই দিনে মা-ছেলে ভোট তুলেছিলাম। মা-ছেলের বয়স কি সমান হয়? এটা কোনো কথা হলো। এ ভুলের জন্য মায়ের ভাতার কার্ডটাও বাতিল হইছে। এখন খুব কষ্টের মাঝে আছি।
তিনি বলেন, গত ৬ মাস থেকে সংশোধনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছি। বর্তমানে আবেদনটি সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা কাছে রয়েছে। এই কাগজ, ওই কাগজ, কত কাগজ দিলাম। কিন্তু এখনো জাতীয় পরিচয়পত্রটি ঠিক হলো না।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (অ:দা:) সাইফুদ্দীন বলেন, ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটা এন্ট্রিতে এমনটা হতে পারে। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সকল কাগজপত্র নিয়ে গেলে সংশোধন হয়ে যাবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে অনুযায়ী ৬২ বছর হলে নারীকে বয়স্কভাতা দেয়া হয়। ওই নারীর জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম হওয়ায় কারণে অনলাইনে ডাটা করা যায়নি। ফলে তাঁর বয়স্কভাতার কার্ডটি বাতিল হয়েছে। তবে, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হলে পুনরায় তার ভাতার কার্ড ইস্যু করা হবে।