অমরাবতির আজকের গল্পে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদের স্বরণে সম্পতি “সিলেটের শহীদ স্মতি উদ্যান”এর অন্যতম প্রধান উদোক্তা প্রখ্যাত সার্জন ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা: শামসুদ্দিন আহমেদ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হুসন আরা আহমেদ এর সুযোগ্য পুত্র ডাক্তার জিয়া উদ্দিন আহমেদ এর ( জিয়া ভাইয়ের) গল্প।জিয়া ভাই যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ডেক্সেল ও টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি ও মেডিসিনের অধ্যাপক এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিশ্ব সিলেট সম্মেলন, কিডনী ফাউন্ডেশন সহ অসংখ্য সংগঠনের প্রধান কান্ডারী আমাদের জিয়া ভাই।
আলোর মশাল নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন পৃথিবীর নানান প্রান্তে। সততা, দক্ষতা মেধা পরিশ্রম আর অপরিসীম দেশপ্রেম নিয়ে তিনি সমাজ উন্নয়নে রেখে চলেছেন গঠনমূলক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অমরাবতি গৌরবান্বিত বোধ করছে জিয়া ভাই এর যোগদানের মাধ্যমে।শুধু তাই নয়, তিনি অমরাবতির বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীকে স্বাগত জানিয়ে গাছ লাগানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। সুস্বাগতম শ্রদ্ধেয় জিয়া ভাই। আশাকরি অমরাবতি আপনার পরামর্শ ও সহযোগিতায় আরো বিস্তৃত হবে, কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে। আর কথা নয়, আসুন দেখে নেই, কি আছে সদ্য যোগদান কারী অমরাবতিয়ান ডাঃ জিয়া উদ্দিন আহমেদ এর গল্পে।
ছেলে বেলার ছোট্ট গল্প । ১৯৬৯-১৯৭০ সালের কথা। একটি ৫ বছরের ছেলে চুপটি করে এসে সিলেটের হাউজিং এস্টেটের আমাদের বাড়ীর বাগান থেকে ফুলের গাছ তুলে নেবার চেষ্টা করতো । ছোট্ট হাতে টানা টানি করায় গাছগুলি প্রায়ই নষ্ট হয়ে যেতো। আমাদের বাগানের মালী ছিল নাগা, সে আবার ড্রাইভার ও। তার কঠিন বকাবকিতে ছেলেটির কোন ভ্রুক্ষেপই ছিল না। ছেলেটির ধারনা এটি তার প্রাপ্য । গেট বন্ধ থাকলে শিকের উপর ঝুলে মিস্টি গলায় কচি কন্ঠ শোনা যেতো “ এরে একটা ফুল দিবানি”। ধীরে ধীরে আমাদের ৫ ভাইবোন আর বাবা মা তাকে বেশ স্নেহ ও সমীহ করতে লাগলেন। এত ছোট ছেলের ফুলের জন্য এত ভালোবাসা আমাদের বেশ আনন্দ দিতো।আমাদের বাসার নাগা মালী, তার এক মাত্র শত্রু। বুড়ো মালী সব সময় গাছের যতন করছে আর ছেলেটি তার দৃষ্টি এড়িয়ে ফুলের গাছ টানছে। মারমুখী মালী নালিশ করতো আমার বাবাকে। বাবা মৃদু হাসতেন। আমার মা ( সিলেট মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা আহমেদ) সেই ছেলেটির নাম দিলেন ফুল রসিক ।
তারপরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো , জীবন আমাদের পালটে গেল। কে কোথায় ছিটকে পড়লাম । মাঝে মাঝে কোন বোনের মনে হত সেই নরম কন্ঠের শিশুর কথা, যে কোন বাড়ী থেকে আসতো জানা হয়নি , কিন্তু ফুলের জন্য ছিল তার অগাধ ভালোবাসা ।প্রতি বছর সিলেট যাই। তবে ৫১ বছর পর সেবার সিলেট থাকার সময় হঠাৎ একটি লম্বা বড় সড় মানুষ বাসায় এলো । আমি বাইরে মিটিং এ। সে বকুলকে (আমার স্ত্রী) তার পরিচয় দেবার চেস্টা করলো। অনেক দিন মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে বেশ ভালো আছে, তবে সে শুধু খুঁজে বেড়ায় এই খালি বাসায় কবে কেউ বিদেশ থেকে আসবেন আর সে দেখতে যাবে। সে বললে, “আমি ফুলের গাছ নেবার জন্য উপড়ে ফেলতাম আর মালী খুব রেগে যেতো। একদিন আপনার শশুর ( আমার বাবা শহীদ ডা: শামসুদদীন আহমেদ) নজর করলেন। আমি বললাম আমাকে মালী গাছ দেয় না তাই উপড়ে ফেলি।” উনি মৃদু হেসে মালীকে বললেন, “এবার থেকে দুটি একই রকম গাছ লাগাবে যেন একটি সে উপড়ে নিতে পারে”।তারপর ফুল রসিকের ফুলের গাছ পেতে আর অসুবিধা হয়নি। সে এখন বেশ বাগান করে । আমাকে কয়েক বার দেখতে আসলো হাতে ফুলের গাছ। মুখে কত কথা, যেন শেষই হয়না।
গল্পটি ছোট। কিন্তু আমার সর্বদা ব্যস্ত থাকা বাবার মৃদু হাসি ভরা মুখ টি মনের কোণে ভেসে উঠলো । বাবাকে আমরা তেমন পেতাম না, তাই তার সুক্ষ অনুভুতি গুলি জানা হয় নাই ।তবে ফুলের বাগানের খুব শখ ছিল। ১৯৭০ সালে বাড়ীতে প্রথম যেদিন একসাথে পাঁচটি Night blooming ফুটেছিল আর সুবাসিত হয়েছিল চারিধার, তখন তা দেখাবার জন্য অনেককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। লাঁঠি ভর করে কস্ট করেও পুরান লেইন থেকে এসেছিলেন এডভোকেট জ্যোতিভূষণ চৌধুরী কে। মায়ের হিন্দু মামা ( সুনামগঞ্জের হাসকুরি/বীর গাঁও এর পূর্ব পুরুষরা একই পরিবারের ) । কিছু দিনের জন্য সিলেটে আবার মনে পড়ছিল সোনালী দিন গুলির কথা। হঠাৎ মনে হল কোন ঘটনা ই তো ছোট নয় । অনেক বড় অনুপ্রেরণার জোগান দিতে পারে।
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে।বাংলাদেশের মত শীতে আমেরিকার পূর্বকোনে কোন ফুল হয় না।তাছাড়া বসন্ত, বর্ষা, শরতের সময় বিভিন্ন ক্ষণ স্হায়ী ফুল হয়।যখন ফুটে তখন খুব সুন্দর লাগে।
বাগানে যখন এনুয়েল গাছ ( যেমন পরের বছর আর হয় না, যেমন কম বেরং এর গাদা, পেনসি, মামস ইত্যাদি) যে বছর যা লাগানো হয় তাই হয়। কোন বছর বেশী, কোন বছর কম লাগাই। আর যেগুলি পেরিনিয়েল প্রতি বছর উঠে বাল্ব থেকে (যেমন ডেফোডিল , ইত্যাদি ) আর বড় গাছ গুলি যেমন ম্যগনলীয়া , ফরসাইথিয়া , হাইড্রেনজ্য়ান, রডেরেনডরাম , ক্যমেলিয়া , এজেলিয়া , ব্রাইডেল ভেইল ইত্যাদি তাদের সময় মত ফুটে। সারা বছর একটি না একটি তে ফুল থাকে । ফলের গাছে আমার কোন ভালো খবর নেই। শুধু ডুমুর বেশ ধরে। নেকটারীন বড় হবার আগে কাঠবিড়ালি খায়। আপেল আর পেয়ার ধরেনা। মনে হয় আরো পড়া শুনা করা দরকার।