অমরাবতির এবারের গল্পে থাকছে, বিশিষ্ট সমাজ সেবক, শিক্ষাবিদ ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব, অমরাবতি অন্যতম সদস্যা ও সিলেট প্রতিনিধি সুলতানা সাত্তারের বাগান বিলাসের কথা। আসুন জেনে নেই কি রয়েছে সুলতানা সাত্তারের গল্পে।
ছোট বেলা থেকে আমার গাছের প্রতি দূর্বলতা ছিল। খুব সখ করতাম ফুল গাছ লাগানোর। আমার এখনো মনে আছে,আগের দিনে দইয়ের বড় বড় পাতিল ছিল। আমি দইয়ের পাতিলে মাটি ভরে ফুলের গাছ লাগিয়ে, আমাদের ঘরের বারান্দায় রাখতাম,দেখতে বেশ সুন্দর লাগতো। আমার আব্বা মরহুম মোঃ আবুল কালাম (মন্না মিয়া) পেশায় একজন ব্যবসায়ী থাকলেও তিনি নিয়মিত সব্জি বাগান করতেন।আব্বার সব্জির প্রতি বেশী আগ্রহ ছিল বলে নিয়মিত বিভিন্ন জাতের সব্জি চাষ করতেন। যেমন টমেটো,ঢেড়শ,সীম,মূলা, বেগুন লাউ,লেটুস পাতা, গাজর, বীট, পুঁদিনা, ধনিয়াপাতা সহ বিভিন্ন ধরনের সব্জি লাগাতেন।আব্বা সকাল বিকাল বাগানে পানি দিতেন, মাটি খুড়াখুড়ি করতেন। এ সব দেখে আমার খুব ইচ্ছে লাগতো বিধায় আমিও আব্বার সাথে সকাল বিকাল ঝাজড়ি দিয়ে পানি দিতাম, আগাছা উঠাতাম।বাগান পরিষ্কার করতাম বিধায় আমার আব্বা হেপি থাকতেন,আমাকে খুব আদর করতেন। যা আমার খুব ভালো লাগতো।অপর দিকে আমার আম্মাও সীম, লাউ, কুমড়া ও পেঁপে গাছ লাগাতেন। এতে করে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যেত।
আগেকার দিনে শহরের বাড়ীগুলোতে একান্নবর্তী পরিবারের ছোঁয়া ছিল বিধায় আমার চাচাদের ঘর ছিল পাশাপাশি।বাড়ীতে আম, জাম, কাঠাল, লিচু, পেয়ারা,বরই,তেতুল,শরীফা, তুতফল,আমড়া জামরুল, কলা,নারিকেল সহ বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ ছিল। কিন্ত ফুল গাছ লাগানোর তেমন জায়গা ছিল না তবুও সবার ঘরের কোণে বারিন্দার সামনে অফিস ফুল, মানি প্ল্যান্ট, পাতা বাহার ও গোলাপ ফুল সহ অন্যান্য গাছ ছিল।চাচার বাসার সামনে যখন গোলাপ ফুটতো তখন মনে হতো সারা গাছটা যেন হাসছে।হাসনা হেনা ফুলের একটি গাছ ছিল, রাতের বেলা যখন ফুল ফুটতো,তখন সারা বাড়ী ঘ্রাণে ভরে যেতো।আমার কাছে এগুলো খুব ভালো লাগতো বিধায় আমি গাছগুলোর যত্ন করতাম। বড় হয়ে লেখা পড়ার প্রায় শেষের দিকে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমার স্বামী ছিলেন কলেজ শিক্ষক আর আমি ছিলাম স্কুল শিক্ষিকা। আমরা ভাড়াটিয়া বাসায় থাকতাম।হাতে সময় কম ছিল বলে বাগান করার সুযোগ পেতাম না।
২০০২সালে আমি যখন আমার বর্তমান বাসায় আসি, তখন আমি এই বাসার ছাদের উপর লাউগাছ,নাগা মরিছ, টমেটো,রুজট পাতা,কাচাঁ মরিচ ,ধনিয়া পাতা,করোলা এগুলো লাগাতাম অনেকটা ভয়ে ভয়ে কারণ ভাড়াটিয়া বাসা তো । যদি মালিক বলে উঠে ছাঁদ নষ্ট হয়ে যাবে। যদিও মালিক পক্ষ এখন পর্যন্ত তা বলেননি।ছাদ বাগানে ফুল গাছ লাগাতাম তবে গাদা ফুল আমার খুব পছন্দ ছিল বলে সব সময় গাদা ফুলের গাছ লাগাতাম। যাই হউক বিশ্ব পরিবেশ বাদী সংগঠন ‘অমরাবতি’ সংগঠনের প্রথমে সদস্যা ও পরে যখন প্রতিনিধি হলাম তখন থেকে গাছ লাগানোর উৎসাহটা ভীষণ ভাবে বেড়ে গেল।কারণ অমরাবতির অন্যান্যদের সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগাতে যখন যেতাম তখন খুব ভালো লাগতো।গাছ লাগাতে আনন্দ পেতাম।
আমার শখের মধ্যে আরেকটি হলো নিজ অবস্থান থেকে সমাজের সেবা করা।তাই ভাবতাম গাছ লাগানোও একটা সমাজ সেবা।সত্যিই কথা বলতে অমরাবতি আমাকে অতিমাত্রায় উৎসাহিত করেছে যে, গাছ-গাছালী,লতা-পাতা কে ভালোবাসাতে।যার ফলে চলার পথে যেখানে গাছ দেখি, সেখানে সেই গাছের ছবি তুলি।এ যেন আমার অন্য রকম এক ভালো লাগার অনুভূতি ।আজ থেকে যোল বছর আগে, আম খেয়ে বড়া (আমের বিচি) মাটিতে পুঁতে ছিলাম। গাছ উঠেছে এবং আমার যত্নের ফলে গাছ বেশ বড় হয়েছে।গতবছর আম ধরেছিল কিন্ত ভাগ্যে নেই তাই খাওয়া হয়নি।এবার আম গাছে আম ধরেছে।আমার এতো আনন্দ লেগেছে বলা বাহুল্য,তাই নিজেকে ধন্য মনে করছি।আনন্দের মাত্রা আরেকবার বৃদ্বি পেয়েছিল, যখন অমরাবতির বাগান প্রতিযোগিতায় সিলেট চাপ্টারে আমার বাগান প্রথম স্হান লাভ করেছিল।যার ফলে গাছ লাগানোর উৎসাহ আরো দ্বিগুণ বেড়েছে। মনে মনে ভাবছি আমি বাগান করতে পারবো, পরিবেশকে রক্ষার জন্য সবুজে সবুজে গড়ে তুলবো আমার বাগান। কি যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। গাছ লাগানো নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে।তন্মধ্যে একটি স্মৃতি আজো আমার মনে দোলা দেয় ।তাহলো আমার মেয়ের ছোট বেলার কথা।শিশু একাডেমী কর্তৃক পরিবেশ দিবসে বৃক্ষ সম্পর্কে বক্তব্য প্রদান করে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিল পেয়ারা ও কামরাঙ্গা গাছ। গ্রামের বাড়ীতে কামরাঙ্গা গাছ, আর ভাড়াটিয়া বাড়ীতে পেয়ারা গাছ রোপনকরেছিলাম। এখন পেয়ারা গাছে ফল ধরছে আমরা ভোগ করতে পারছি না।কারণ ঐ ভাড়া বাড়ীটি আমরা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগে। পরিশেষে যে কথাটি না বললেই নয় তাহলো, আমরা সবাই মিলে চেষ্ঠা করি,গাছের প্রতি সহনশীল হই,গাছ লাগাই,আর পরিবেশ রক্ষায় অমরাবতি’র ক্যাফেলায় যোগ দান করি,সবুজের সমারোহ গড়ে তুলি।দেখবেন শুধু বাংলাদেশ নয়,একদিন সবুজে সবুজের রাঙ্গিয়ে তুলবো সবুজ পৃথিবী।।