অমরাবতির গল্প-(৩০)—-মোঃ শেবুল চৌধুরী

প্রকাশিত: ১২:০২ অপরাহ্ণ, জুন ৫, ২০২৩ | আপডেট: ৬:৫১:অপরাহ্ণ, জুন ৫, ২০২৩

অমরাবতির পথ চলা মূলতঃ অমরাবতিয়ানদের গল্প নিয়ে।
অমরাবতির অন্যতম সদস্যা বিশিষ্ট শিক্ষিকা পারভীজ জাহান ডলি একাধারে একজন শিক্ষাবিদ ও বাগান বিলাসী ও দেশপ্রেমিক ।অমরাবতিয়ান ডলি অমরাবতিকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেন। আসুন জেনে কি রয়েছে পারভীজ জাহান ডলি’র গল্পে ।

 

 

আমার পিতা সাখায়ত আলী টিএন্ডটি’র এসডিও থাকার কারণে আমাদের বেঁড়ে উঠা বিভিন্ন স্হানে এবং বিভিন্ন শহরে। সারা জীবন আমার বসবাস যখন শহরে, তখন গাছ লাগানোর সুযোগ থাকলো কই ? কংকিট খুঁড়ে তো আর চাঁরা লাগানো যায় না। মাঝে মাঝে ভাবতাম বাগান করার সুযোগ বেশী রয়েছে গ্রামে। বিভিন্ন সময় গ্রামে বেড়াতে গেলে বুঝা যায় গ্রামের মানুষের বাগানের সৌন্দর্য বোধ খুব তীক্ষ্ণ। কারণ গ্রামের খুব কম বাড়ী পাবেন যেখানে ফুল বাগান নেই। বলতে গেলে গ্রামের প্রতিটি বাড়ীর উঠানের এক কোনে পাওয়া যায় ফুল বাগান। সে সময় দুটো ফুল চোখে পড়তো যা আজকাল হাঁরিয়ে যেতে চলছে।এক মোরগ ফুল / মোরগ ঝুটি,বা মোরগাছুট। স্হান ভেদে কোন কোন জায়গায় মোরগাছুটকে আবার লাল মোর্গা বলে কেউ কেউ ডাকতেন।মোরগাছুট ফুলের মন্জুরিটি দেখতে মোরগের মাথার ঝুটির মতো বলেই এর নাম হয়েছে মোরগ ঝুটি ফুল বা মোরগাছুট।অপরটি হচ্ছে ঘাস ফুল, অফিস ফুল বা অফিস টাইম ফুল।গ্রামাঞ্চলে এই ফুলটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল বলে প্রায় বাড়ীর উঠানে দেখা যায়।আজ কাল আবার টবে করে বাসা বাড়ীর ছাদে বা ফ্লরে ও এই ফুল দেখা যায়।এই ফুল নানান রঙের হলেও ফুলের কোন ঘ্রাণ থাকে না । দেখতে সুন্দর বিধায় সবাই এই ফুল লাগান।একটা কথা আছে না,ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।আমার বাগান করা বা বাগানের পরিচর্ষা করার সুযোগ হয় মূলতঃ আমার বিয়ের পর।আমার শ্বশুর বাড়ীটি ১২০ বছরের পুরাতন। টাইংগল সিস্টেমের বাড়ীটি অনেকটা আসাম আদলের বাড়ী ।ঐতিহ্যেগত ভাবে আসাম আদলের বাড়ীগুলো একে বারেই সিলেট ও আসাম অঞ্চলের স্হানীয় স্থাপত্য শৈলির নিদর্শন ছিল। বাসার চার পাশে সামান্য মাটি ছিল।বাসার চার দিকে টব রয়েছে।আমার জন্য সোনায় সোহাগা।বাগান করার পুরো পরিবেশ বিদ্যমান।আমার স্বামী এ,কে,এ,আসাদ, ফয়সল মূলতঃ একজন ব্যবসায়ী হলেও একজন বাগান বিলাসী যে তা শুরুতেই বুঝে নিয়েছিলাম। আমি আমার স্বামীর সাথে পরিকল্পনা করে বাসার চার পাশে যেখানে মাটি রয়েছে,সেখানে আম, কাঠাল,ডালিম, বরই,সহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগানো হয়। ছাদ বাগান এবং বাসার মধ্যে টবে লাগানো হয়েছিল জিনিয়া, বাটার প্লান্ট, এডোনিয়াম,টগর, মরু গোলাপ,পাতাবাহার সহ বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ। গাছ লাগানো ও পরিচর্যা আমি যতটুকু সম্ভব হয় করি।পানি দেওয়া সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ আমার স্বামী ও আমাদের ড্রাইভার করেন।

 

 

 

পরিবেশের জন্য সময় ও সুযোগ পেলে সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।২০১৮ সালে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যে বাহী আনন্দ নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ (যেখানে আমি প্রায় ৩০ বছর যাবত শিক্ষকতায় রয়েছি) এর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে পরিবেশ এবং নগরের শ্রী বৃদ্বির জন্য নগরীর রিকাবী বাজার থেকে পাঠানটুলা পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে প্রায় চার শত কৃঞ্চচূড়া,রাধাচূড়া ফুলের গাছ লাগাই।পরবর্তীতে তার পরিমাণ আরো বৃদ্বি পেয়েছে।যার ফলে নগরীর শোভা বাড়িয়েছে লাল হলুদের কৃঞ্চ ও রাধা চূড়ার সমাহার।এবার আসি অমরাবতি প্রসঙ্গে। “অমরাবতি” বাগান বিলাসীদের ঠিকানা ।বৃক্ষপ্রেমিকদের ঠিকনা।পরিবেশ বাদী ঠিকানা। সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ সূদুর যুক্তরাজ্যে থেকে শুরু হলেও অলিখিত বা অসংবিধানিক ভাবে এর শাখা-প্রশাখা বলতে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরের বাঙালী পাড়ায় রয়েছে।আমি ২০২১ সালের এপ্রিল থেকেই অমরাবতিতে আছি।আমার ভাগিনী ডাঃ খূর্শিদা তাহমিন শিমুর (অমরাবতির প্রধান সমন্বয়ক সিলেট চাপ্টার) প্রকৃতি প্রেম ও বাগানের প্রতি ভালোবাসা দেখে আমার উৎসাহ আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।আমাদের বাগান আগাছালো টাইপের ছোট্ট একটি বাগান। বাগানটি আমি আমার নিজের মতো করে সাজিয়েছি।যেখানে আমি কিছু কাজ করি, আনন্দ পাই কিংবা ভালো লাগার কিছু সময় কাটাই,যা একান্ত আমার এক অন্যরকম এক আনন্দ বিলাস। একদিন অমরাবতির এক মিলন মেলার ডাক আসলো। গেলাম পতিদেব সহ। এখানে যে কথাটি বলা বাহুল্য তাহলো,অমরাবতির পোগ্রামের ইনভাইট পেয়ে বেশী রোমাঞ্চকর আমার চেয়ে আমার হাজবেন্ড।তাই তাঁর আগ্রহ অনেক বেশী।এক তো একজন বাগান প্রেমিক মানুষ, পরিবেশ বাদী তো বটেই। তার উপরে অমরাবতির মিলন মেলা।তাই দুজনই গেলাম। আমরা অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম উপভোগ করলাম। কিছু সময় অন্য ভুবনে কাটালাম ।অনেক বিশিষ্ট জনদের উপস্থিতি ভালো লাগলো। বিশেষ করে এডমিন থেকে শুরু করে সকল সদস্য/সদস্যাদের দেশপ্রেম,মানব-প্রেম,এগুলো
আমাদের এই ধরনীকে সুস্থ, সুন্দর বাসযোগ‍্য রাখার যে অদম্য চেষ্টা,তা আমাদেরকে অভিভুত করেছে।

 

 

 

 

পরিশেষে যে কথাটি না বললেই নয়, তা হলো অমরাবতির মূলমন্ত্রের সাথে সম্পূর্ণ একাত্বতা ঘোষনা করে বলতে চাই, শত ব্যস্ততার মাঝেও যদি এক শষ‍্য পরিমাণ মানুষের জন্য, পৃথিবীর জন্য কাজে আসতে পারি তবে আমার এই স্বর্গবাস অর্থাৎ অমরাবতিতে বসবাস স্বার্থক হবে!!”অমরাবতির” ‘Lighthouse’ আমাদের শেবুল ভাই, উনার সম্পর্কে কিছু বলার দুঃসাহস নেই। তিনি নিজেই অমরাবতিতে অমরত্ন।শুধু বলবো ‘হে আল্লাহ্ তোমার অসিম দয়ার ভান্ডার থেকে একফোটা রহমত বর্ষণ করে আমাদের শেবুল ভাইকে শতবর্ষ আয়ু দান কর’!!আমীন।।