অমরাবতির গল্প–(৩৪)—মোঃ শেবুল চৌধুরী

প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২৩ | আপডেট: ১১:০৫:পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২৩

অমরাবতির গল্প মানেই পরিবেশবাদীদের গল্প। বৃক্ষরোপনের গল্প। বৃক্ষ পরিচর্যার গল্প।একটা কথা আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা কঠিন। তেমনি বৃক্ষরোপনের চেয়ে বৃক্ষের পরিচর্যা করা অনেক কঠিন। অমরাবতির আজকের গল্প যাঁকে নিয়ে তিনি হচ্ছেন অমরাবতির অন্যতম সদস্য, সিলেট দক্ষিণ সুরমা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিসেস নুসরাত হক। বিগত দুই বছরে প্রায় ৫০/৬০টি প্রতিষ্ঠানে অমরাবতির পক্ষ থেকে আনুমানিক ১০০০ বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। কিন্ত দক্ষিণ সুরমা হাই স্কুলে প্রথম বছর থেকেও ফলের গাছগুলোর সুফল বয়ে আনতে শুরু করেছে । তার একমাত্র কারণ ম্যাডাম নুসরাত হকের সঠিক পরিচর্যা। তাই আসুন জেনে নেই কি রয়েছে অমরাবতিয়ান নুসরাত হক এর গল্পে।

 

১৯৮১সাল।এস,এস সি পরীক্ষা শেষ। হাতে অফুরন্ত অবসর।আর সেই সময়ই আমরা নতুন বাসায় শিফট হলাম। শুরু হলো বাসার সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। লাগানো হলো রঙ্গন টগর, শিউলি সহ কিছু মৌসুমী ফুলের চারা।তখন সিলেট শহরে হাতে গুনা কিছু নার্সারি ছিল।বেশীর ভাগ চারা সংগ্রহ করা হতো পরিচিত জন এবং বন্ধু-বান্ধবের কাছ হতে।এক সময় গাছ লাগানো একটা নেশায় পরিনত হলো।বাসার করিডোর, এবং ড্রইংরুমে ছিল কিছু ইন্ডোর প্লান্ট। পাশাপাশি পেয়ারা, আম,কাঁঠাল সহ লাগানো হলো বিভিন্ন ধরনের ফলজ বৃক্ষ। আস্তে আস্তে ব্যস্ততা বাড়লো। স্বামী,সন্তান ,সংসার, চাকুরী,সব মিলে নিঃশ্বাস ফেলার অবসর নেই।কিন্ত তারপরও থেমে ছিল না বাগান করা।বড় পরিসরে সম্ভব না হলেও বাগান করার প্রচেষ্টা সব সময়ই অব্যাহত ছিল। ২০২০সাল। আমি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “দক্ষিণ
সুরমা সরকারী হাইস্কুল, আলমপুর, সিলেট “-এ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেলাম। ।এরপর থেকেই আমার একমাত্র ভাবনা ছিল, কিভাবে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্বি করা যায় ? শুরু হলো বাগানের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের কাজ। প্রথমেই বিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাগানো হলো কিছু ফলজ,বনজ আর ঔষধি বৃক্ষ সহ কিছু ফুলের চাঁরা।এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গন একদিন ফুল-ফলে শোভিত হবে এ ছিল আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর ঠিক তখনই অমরাবতির সাথে আমার পরিচয়।আমার ভাবনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসলো এই বৃক্ষপ্রেমিক সংগঠন। এ সংগঠনের সহায়তায় কিছু ফলজ,বনজ,ও ঔষধি গাছের চাঁরা।বৃক্ষরোপন করেই এ সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেননি বরং নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন, মাঝে মাঝে গাছের অবস্থা দেখতে বিদ্যালয় পরিদর্শন ও করেছেন। তাঁদের দায়িত্বশীল ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে।আজীবন এই বিদ্যালয়টি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে অমরাবতির অবদান।
প্রায় বছর দু’ একের মধ্যেই বিদ্যালয়ে লাগানো গাছগুলো থেকে সুফল পেতে শুরু করেছি।এ বছরের মধু মাসেই বৃক্ষরা সেজেছে স্বরূপে এবং পত্রপুষ্পে পল্লবিত হয়েছে।পরিসর অল্প কিন্তু পরিতৃপ্তি পূর্ণতায় ভরা।আমি আশা করছি, প্রল্লবিত হলেও আগামীতে এই সব বৃক্ষের ফল-ফলাদি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্ঠি সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে এবং এ সংগঠনের স্বপ্নের জায়গাটা আরো সমৃদ্ধ হবে।

বাগান বিলাসীদের নিয়ে অমরাবতির যাত্রা শুরু হলেও সময়ের পরিক্রমায় সদস্য সংখ্যা এবং কাজের পরিধি বেড়েছে, ব্যাপকতা ও পেয়েছে বিশ্বব্যাপী। বর্তমানে এ সংগঠনটি কেবল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিই পালন করছে না বরং আর্ত মানবতার কল্যাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।গত বছর অস্বাভাবিক বন্যায় জনজীবন যখন বিপর্যস্ত, আমরা দেখেছি এই সংগঠন বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর বদলে আর্ত মানবতার কল্যাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্বিচারে গাছ কাটা,নদী ভরাটসহ অনেক কারণেই পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঠেকাতে অমরাবতির
সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পাবে পরিবেশের এ বিপর্যয় ঠেকাতে। এ জন্য স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরকে বৃক্ষ রোপনের মতো মহৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই এ সংগঠনের উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল ও সার্থক হবে।


অমরাবতির প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রথমেই স্মরণ করতে হয় অমরাবতির কর্ণধার শেবুল চৌধুরীকে। যাঁর হাত ধরেই এটা প্রতিষ্ঠা পায়।শুধু প্রতিষ্ঠা নয়,যাঁর মেধা,শ্রম এবং জনকল্যানমূলক মনোভাবের জন্য এই সংগঠনটি আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে।শেবুল ভাইয়ের সাথে পরিচয় আমার স্নেহ ভাজন ছোট ভাই আহমদ জিন্নুন দারার মাধ্যমে। অতঃপর অমরাবতি
সিলেট চাপ্টারের অন্যতম প্রধান, অত্যন্ত সুন্দর মনের মানুষ ডাঃ খূর্শিদা তাহমীন,শিরিন চৌধূরী (সম্বন্বয়ক সিলেট চাপ্টার) , সুলতানা রহমান (সেক্রেটারী জেনারেল), রাশিয়া খাতুন (ফাইনান্স ডাইরেক্টর),খালেদা রওশন (অন্যতম ডাইরেক্টর) ,
অমরাবতি সিলেট চাপ্টারের এ,এস জায়গীরদার বাবলা ও সুলতানা সাত্তার সহ আরো অনেকের সাথে পরিচয় হয়।তাদেঁর হাত ধরেই এ সংগঠনটি পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর অক্লান্ত প্ররিশ্রমে সংগঠনের সুনাম এবং কার্যক্রম উত্তরোত্তর বৃদ্বি পাবে এই প্রত্যাশা সব সময়।

 

 

এই সংগঠনটি সম্প্রতি বাগান প্রেমিদের উৎসাহিত করতে পুরস্কৃত করছে। শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে ফ্রী কম্পোস্ট ও মাটি বিতরন করা হয়েছে।এই উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবী রাখে।এতে করে বাগান করার উৎসাহ ও আগ্রহ দুটোই বাড়বে।যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।তবে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমার অনুরোধ রহিল সম্ভব হলে ভবিষ্যতে এ পুরস্কারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। আমার অনুভবে এসেছে ,অমরাবতির ব্যাতিক্রমধর্মী কাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাক্তিবর্গের কাছে অনুসরণ যোগ্য হয়ে থাকবে আজীবন। পরিশেষে যে কথাটি বলা দরকার তা হলো, লক্ষনীয় যে দেশে বিদেশে বসবাসরত বিভিন্ন গুনীজনদের সম্পৃক্ততা এই সংগঠনকে সমৃদ্ধ এবং কাজের ক্ষেত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাচ্ছি অমরাবতির সদস্য/সদস্যাদের, যাঁরা পরিবেশ রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি গর্বিত এর সাথে যুক্ত হতে পেরে। এই মানবিক সংগঠনটির সদস্যদের প্রতি আমার সহযোগিতা এবং শুভ কামনা নিরন্তন।