রংপুরে পীরগাছায় মেয়েকে অপহরণের পর গুম করার মামলায় বাবা লুৎফর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এই রায় প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার মকরমপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে রাবেয়া খাতুন ভালোবেসে বিয়ে করেন একই এলাকার আব্দুর রশীদকে। এ নিয়ে রাবেয়ার পরিবারের সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে রাবেয়ার ভাসুর হোসেন আলী হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় রাবেয়ার বাবাসহ পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। মামলায় লুৎফর রহমানসহ অন্য আসামিরা নিম্ন আদালতে খালাস পান। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সাক্ষী ছিলেন রাবেয়া খাতুন।
রাবেয়া বাবার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে সাক্ষী দেওয়ার কথা বললে লুৎফর রহমান তাকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাবেয়াকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশলে পীরগাছা চৌধুরানী বাজার বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসেন লুৎফর রহমান ও তার সহযোগীরা। কিন্তু রাবেয়া বাবার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে চিৎকার শুরু করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে লুৎফর রহমান মেয়েকে সেদিনের মতো বাড়ি ফেরত নিয়ে যান।
এরপর হঠাৎ করেই রাবেয়া বেগমের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন তার ছেলে রাঙ্গা মিয়া থানায় ডায়েরি করেন। পরবর্তীকালে এ ঘটনায় পীরগাছা থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করেন রাঙ্গা মিয়া। বিচারক মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। পুলিশ তদন্ত শেষে লুৎফর রহমানসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলায় লুৎফর রহমানকে দোষি সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং অপর আসামিদের খালাসের রায় দেন বিচারক। জরিমানার অর্থ নিহত রাবেয়ার সন্তানদের প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকার পক্ষে মামলা পারিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর বিশেষ পিপি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর চাঞ্চল্যকর একটি মামলার রায় হলো। রায়ে প্রধান অভিযুক্ত সাজা পেলেও অপর আসামিরা খালাস পেয়েছেন।
রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।