মোঃ ইব্রাহীম আলী, কুলাউড়া : এবারের ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলে কুলাউড়া উপজেলার চার মেধাবী শিক্ষার্থী সফলতা পেয়েছেন। গত ০৩ আগস্ট সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ঘোষিত ফলাফলে সারা দেশ থেকে ২৫২০ জন প্রার্থীকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কুলাউড়া উপজেলার চার জন মেধাবী শিক্ষার্থী বিসিএসের চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে মুহিবুর রহমান, শিক্ষা ক্যাডারে লুৎফুর রহমান, জিল্লুর রহমান চৌধুরী ও জুয়েল আহমেদ। কুলাউড়া উপজেলা থেকে এবার চারজন মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই অর্জনে শিক্ষার্থীদের পরিবার ও এলাকায় খুশির আমেজ বিরাজ করছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এই অর্জনে গৌরবান্বিত হয়ে শুভেচ্ছা বাণী ও মিষ্টি মুখ করিয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা থেকে ৪১তম বিসিএসে সফল চার মেধাবী হচ্ছেন-
মো. মুহিবুর রহমান (পুলিশ ক্যাডার) কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মখলিছুর রহমান ও আয়েশা আক্তার দম্পতির পুত্র। মুহিবুর রহমান ইতিপূর্বে ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে চুনারুঘাট সরকারি কলেজে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহন করে এবার পুলিশ ক্যাডার (এএসপি) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি হিঙ্গাজিয়া সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম এবং সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগ থেকে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। কেমন করে এই সাফল্য এলো এমন প্রশ্নের জবাবে মুহিবুর রহমান বলেন, পরিবার ও বড় ভাই মাহবুবুর রহমান এবং স্ত্রী শারমিন জাহান মিতার অনুপ্রেরণায় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিসিএসের এই সাফল্য।
মো. লুৎফুর রহমান (শিক্ষা ক্যাডার) কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের প্রবাসী মো. আব্দুর রহমান ও রিনা বেগম দম্পতির পুত্র। বর্তমানে তিনি পূর্বভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ২০১১ সালে বাবনিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল, লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পাশ করেন। তার এই সফলতার পেছনে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্যশীল ও কৌশলী হয়ে পড়াশোনা মাধ্যমে বিসিএসের এই সাফল্য অর্জনে ভূমিকা রেখেছে।
মো. জুয়েল আহমেদ (শিক্ষা ক্যাডার) কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামের মৃত মো. কবির মিয়া ও আফজান বেগম দম্পতির পুত্র। বর্তমানে তিনি শিকড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি ২০১১ সালে রাউৎগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে প্রাণী বিদ্যা বিভাগ থেকে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। সফলতার কারণ জানাতে গিয়ে জুয়েল আহমেদ বলেন, পৃথিবীতে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে হলে ভালো একটি চাকরির স্বপ্ন ছিল আমার। তাই কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিসিএসে সফলতা আসে আমার।
মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী (শিক্ষা ক্যাডার) কুলাউড়া উপজেলার পৌর শহরের উছলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক মৃত লুৎফুর রহমান চৌধুরী ও শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. দিলরুবা বেগম দম্পতির পুত্র। তিনি ২০১৩ সালে নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ২০১৫ সালে জালালাবাদ ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ সিলেট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। কেমন করে এই সাফল্য এলো এমন প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর রহমান বলেন, আমার মায়ের সংগ্রাম মুখর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল আমার সব অনুপ্রেরণার উৎস। বিসিএসে সাফল্য পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম ও পড়াশোনা করতে হয় পরিকল্পনামাফিক।
এ বিষয়ে লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, আমাদের লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজের ২০১৩ ব্যাচের ২ জন শিক্ষার্থীসহ কুলাউড়া উপজেলার চার জন শিক্ষার্থী এবারের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আমরা গৌরবান্বিত। শিক্ষার্থীদের সুউজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
জানা যায়, সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দিতে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ২০২১ সালের ১৯ মার্চ প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় অংশ নেন পৌনে পাঁচ লাখ প্রার্থী। ২০২২ সালের ০১ আগস্ট ২১,০৫৬ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য ঘোষণা করে ফল প্রকাশ করে পিএসসি। পরে ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফেব্রæয়ারিতে মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত ০৩ আগস্ট চূড়ান্ত ফলাফলে বিভিন্ন ক্যাডারে ২৫২০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হন। জানা যায়, ভেরিফিকেশন শেষে অতি শীঘ্রই গেজেট প্রকাশ করে উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে পদায়ন করবে পিএসসি।