শুক্রবারের ফজিলত ও করণীয়

প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২২ | আপডেট: ১১:৪১:অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২২

ইসলামে শুক্রবা‘র গুরুত্ব অপরিসীম। শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিলো জুম্মার দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমা’র দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন।” (ইবনে মাজাহ:১০৯৮)

‘উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এটি একটি মহান দিন। জুমা’র দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদেরকে বলা হয়েছিলো, কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিষ্টানরা রোববারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিলো। অবশেষে আল্লাহ এ উম্মতের জন্য শুক্রবারকে ফযিলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহণ করে নিলো।’ (বুখারি:৮৭৬, মুসলিম:৮৫৫)

 

আরও পড়ুন:  ইসলামের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক

 

বর্ণীত আছে যে, ‘জান্নাতে প্রতি জুমা’র দিনে জান্নাতিদের হাঁট বসবে। জান্নাতি লোকেরা সেখানে প্রতি সপ্তাহে একত্রিত হবেন। তখন সেখানে এমন মনোমুগ্ধকর হাওয়া বইবে, যে হাওয়ায় জান্নাতিদের সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়ে যাবে এবং তাদের স্ত্রীরা তা দেখে অভিভূত হবে। অনুরূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি স্ত্রীদের বেলায়ও হবে।’ (মুসলিম:২৮৩৩)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সূর্য উদিত হয় এরূপ দিনগুলোর মধ্যে জুমা’র দিনটিই হল সর্বোত্তম দিন। এই দিনেই আদম( আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। (আবু দাউদ:১০৪৬)

 

আরও পড়ুন:  শুক্রবারের বিশেষ আমল ও ফজিলত

 

এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। এই দিনে তাঁকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়, এবং এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয় এবং এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিলো। (আবু দাউদ:১০৪৬)

এই দিনেই কেয়ামতের জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। (আবু দাউদ: ১০৪৭)। এই দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (আবু দাউদ: ১০৪৬)। আর এই দিনে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। (আবু দাউদ: ১০৪৭)

নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত ও সমুদ্র সবই জুমা’র দিনে শঙ্কিত হয়। (ইবনে মাজাহ:১০৮৪)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমা’র রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মারা যায়, আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দিবেন।’ (তিরমিযী:১০৭৮)

জুমা’র দিনের আরো অনেক ফজিলত রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহপাক কোরআন পাকে ইরশাদ করেন- হে মুমিনগণ জুম্মার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশেও দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। (সূরা জুমা:৯)

তাই জুমা’র আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুম্মার নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা সব মুসলমানের জন্য ঈমানি দায়িত্ব। এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, তখন মানুষ যে দোয়াই করে তা-ই কবুল হয়।

এই দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। জুমা’র দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর জায়গা থেকে না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরিফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে। দোয়াটি হলো: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লিম তসলিমা’।

হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালোভাবে গোসল করবে, সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে ইমাম সাহেবের কাছে বসবে এবং মনযোগী হয়ে তার খুতবা শ্রবণ করবে ও অনর্থক কর্ম থেকে বিরত থাকবে, তার প্রত্যেক কদমে এক বছরের নফল রোজা এবং এক বছরের নফল নামাজের সওয়াব আল্লাহপাক তাকে দান করবেন।’ (নাসাঈ শরিফ ১৫৫)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে, অতঃপর জুমার মসজিদে গমন করবে এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করবে তার এ জুমা থেকে পূর্ববর্তী জুমাসহ আরো তিন দিনের গুনাহগুলো ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি খুতবা শ্রবণে মনযোগী না হয়ে খুতবা চলাকালীন কঙ্কর-বালি নাড়ল, সে অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিম শরিফ ১/২৮৩)

উপরোক্ত হাদিসগুলোর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জুমার দিনে সব মুসলমানের জন্য কর্তব্য হচ্ছে যে, সব ব্যস্ততা ত্যাগ করে আজানের পূর্বেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে গমন করা, ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা, খুতবা চলাকালীন কথাবার্তা বলা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।