আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির শব্দ মনের জানালা ভাংচুর করে তৈরি করে অন্যরকম অনুভূতি। বৃষ্টির টুনটান শব্দ অনেকেই মনে প্রেমের জাগরণ তুলে। রোমান্টিক চোখজোড়া ঠান্ডা শীতল হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় আকাশের পাজোরে। সাদা সাদা মেঘগুলো বাহারি রঙে একেঁ দেয় পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা। আমরা যেন রাঙিয়ে যায় তুমুল সবুজের সমারোহে।
বর্ষা মৌসুমে যখন চারদিক ভিজে ওঠে তখন আমাদের মন হয় আরও সিক্ত, প্রানে জেগে ওঠে অজানা প্রকৃতির নতুনত্বের ছোঁয়া। বর্ষা মৌসুমের কোনো এক বৃষ্টিভেজা দিনে কাঙ্ক্ষিত সেই প্রিয়জনকে কাছে পেলে বলে দেওয়া যায় হৃদয়ের কোণে জমিয়ে রাখা সব কথা। বর্ষা মানেই গ্রামে কাবাডি খেলার হৈ-হুলেস্নাড় পড়ে যাওয়ার ধুম। যদিও অতীতের মতো এখন আর গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আর নেই। তবুও ঠিক আগের মতো স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। আর তখনি আমরা হয়ে উঠি মন-মননে বর্ষামুখর।
প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কবি ও সাহিত্যিকরা লিখেছেন বহু কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্য ও রচনাবলী। আসলে প্রকৃতির বুকে একমাত্র শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। আর কোথাও চাইলেও সেই শান্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জীবন্দনন দশ, পল্লী কবি জসিম উদদীন সহ অসংখ্য কবিগণ রচনা করেছেন বাংলার রূপ-লাবন্য ও সৌন্দর্য নিয়ে সাহিত্যের নানা দিক। প্রকৃতি প্রেমী না হলে সাহিত্য চর্চা বা সাহিত্যের রসদ খুঁজে পাওয়া যাবে না। নানন্দিক সৌন্দর্যের সাথে সাহিত্যিকরাও বেঁচে থাকতে চান।
জীব, বৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ মানুষকে আগলে রেখেছে যুগের পর যুগ। নান্দনিক বিলাসী জীবন ব্যবস্থার কারণে আমরা এখন আমাদের চারপাশের পরিবেশ ধ্বংস করতে মেতে ওঠেছি। যার বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছে পৃথিবীতে। এখন অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেছে গ্রাম এবং শহরে। যা দ্যাখে আপনি বুঝে ওঠতে পারেন না, আপনি এখন কোথায় আছেন? নদী মাতৃক বাংলাদেশের খাল, বিল, নদী, নালা এখন বুড়িগঙ্গার মতো বিলাপ করছে, আকুতি করছে বেঁচে থাকার জন্য। এদেশের পরিবেশবাদী সংগঠন ও কিছুসংখ্যক বিবেকবান সুশীল সমাজ এই বিষয়গুলো নিয়ে চিৎকার চেচামেচি করলেও রক্ষা হচ্ছে না প্রকৃতির প্রাণ। এ যেন আমারা জেনেশুনে গলা টিপে হত্যা করছি আমাদের নিজ সন্তান। ছয় ছয়টি ঋতুর বাংলাদেশ এখন হুমকির মুখে।
আমাদের নাগরিক জীবন ব্যবস্থা হঠাৎ আষাঢ়ের কালো মেঘের মত বিষাদের রূপ ধারণ করে। দুমড়েমুচড়ে যায় ভালোবাসার জানালা। তখনই বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সুগন্ধি সব ফুল। কদম, কেয়া, কামিনী, ঘাসফুল, শাপলা, বেলি ও বকুলের সুবাসে এখন মুখরিত চারপাশ। আমাদের প্রকৃতি যেন আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ থাকে সেই ব্যবস্থা রাষ্ট্র সমাজের করা উচিত। ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকেই জেগে ওঠে অংকুর।
লেখক; কবি, প্রকাশক ও গণমাধ্যমকর্মী।