মোঃ ইব্রাহীম আলী, কুলাউড়া : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রাম ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধানে অভিযানে নেমেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। আজ মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে আটক জঙ্গিদের নিয়ে অভিযান শুরু করে সিটিটিসি দল।
অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এর আগে গতকাল সোমবার সকালে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজার থেকে স্থানীয় লোকজন ১৭ জনকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করেন।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও পরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) ঘটনাস্থলে এসে তাদের হেফাজতে নেয়।
কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আটকদের সঙ্গে কথা বলার পর সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার নতুন আরেকটি আস্তানায় অভিযান চালানো হবে। তারপরই আমরা এই অভিযান ও আটকদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব।’
এরও আগে শুক্রবার রাত থেকে কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালী বাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জন নারী-পুরুষ ও তিন শিশুকে আটক করেছিল সিটিটিসি ইউনিট।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছিল, তারা নতুন জঙ্গিসংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য।
তাদের আটকের আগে গত ৭ আগস্ট ঢাকার মিরপুর থেকে একই সংগঠনের আরো ১০ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে ১১ আগস্ট ফরহাদ নামে ঢাকা থেকে আটক করা হয়েছিল আরো একজনকে। ফরহাদের দেওয়া তথ্য ধরেই ১২ আগস্ট কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টিউলি এলাকায় অভিযানে নেমেছিল সিটিটিসি।
গত ১২ আগস্ট অভিযান-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি জানিয়েছিল, হয়তো আস্তানা থেকে কিছু লোক পালিয়ে গেছে। তারা আশপাশেই কোথাও অন্য আস্তানায় আত্মগোপন করেছে। সেই থেকে এলাকায় সাধারণ মানুষের নজরদারি থাকায় এবং তারা সচেতন থাকায় ১৭ জনকে আটক করা গেছে। এর জন্য স্থানীয়দের ধন্যবাদ জানিয়ে সিটিটিসির আসাদুজ্জামান বলেন, এখানে যারা আটক আছেন তাদের আমরা পরিপূর্ণভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
তবে আমাদের মনে হচ্ছে, সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার থাকতে পারেন। এরই মধ্যে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সেখানে একজন চিকিৎসক আছেন। তার স্ত্রী দুই দিন আগে পূর্ব টাট্টিউলি থেকে আটক হয়েছিলেন। চীন থেকে পড়াশোনা করে আসা দুজন প্রকৌশলীও আছেন। আটক ওই চিকিৎসক হচ্ছেন সোহেল তানজিম রানা (২৭)। তিনি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সায়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নানের ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন। স্ত্রী মাইশা ইসলাম হাফসাকে (২০) নিয়ে কর্মস্থলের পাশেই ভাড়া বাসায় থাকতেন।
মাইশা শনিবার পূর্ব টাট্টিউলী থেকে আটক হয়েছিলেন। ২৬ জুলাই থেকেই তারা নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে। আটকদের মধ্যে নতুন জঙ্গিসংগঠনের প্রধান ইমাম মাহমুদ আছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এখনো এসব ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ব্যাপারে জানানো হবে। এগুলো খুব স্পর্শকাতর বিষয়, সময়ের ব্যাপার। তারা কেউ হঠাৎ করেই এখানে আসেনি বা ঘর ছাড়েনি। আরো জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে, কেন তারা এই পাহাড়ি অঞ্চলে এসে আস্তানা গেড়েছিল।