জীবনে প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কুলাউড়াবাসীর অসীম ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে নাদেল পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী একে এম সফি আহমদ সলমান (ট্রাক) পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৫২ ভোট। এছাড়া তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মতিন (কাঁচি) পেয়েছেন ৬৬৮ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল মালিক পেয়েছেন ৫৬৫ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা আসলাম হোসাইন রহমানী পেয়েছেন ৩৬৬ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী এনামুল হক মাহতাব পেয়েছেন ৩০৫ ভোট ও বিকল্পধারার প্রার্থী মো. কামরুজ্জামান সিমু পেয়েছেন ১৬১ ভোট।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের এই বিজয়ে উচ্ছ্বসিত কুলাউড়ার মানুষ। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আনন্দে ভাসছেন। রবিবার (৭ জানুয়ারি) ভোট গণনা শেষে একে একে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নাদেলকে বিজয়ী ঘোষণা করার পরপরই ওইসব কেন্দ্রের নেতাকর্মী-সমর্থকেরা খণ্ড-খণ্ড মিছিল নিয়ে নাদেলের কৌলা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সমবেত হতে থাকেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন। নেতাকর্মীরা জানান, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন না। এজন্য উন্নয়নবঞ্চিত ছিলেন কুলাউড়াবাসী। এবার নাদেল বিজয়ী হওয়ায় তার মাধ্যমে কুলাউড়ার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে বলে তারা আশাবাদী ও আনন্দিত।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তার এই বিপুল বিজয়ে কুলাউড়াবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে কুলাউড়াবাসীকে নৌকা উপহার দিয়েছিলেন। কুলাউড়াবাসী সেই উপহারের মর্যাদা দিয়েছে। বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করেছে।’ এজন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের ভোটারদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
নাদেল বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য কুলাউড়াবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকাকে বিজয়ী করেছেন। তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে ভোট দিয়েছেন, সেই প্রত্যাশা পূরণে আমি সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবো।’
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কুলাউড়ার এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। তার বাবা শামসুল আলম চৌধুরী ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির অগ্রসর ব্যক্তিত্ব। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন সমান সক্রিয়। নাদেলের নানা আল্লামা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বিশকুটি (রহ.) ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। নাদেল ছাত্রজীবনেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নব্বইয়ের দশকে সিলেটে পরিচ্ছন্ন ইমেজের ছাত্রনেতা হিসেবে সুখ্যাতি পান নাদেল। পরে তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক একাগ্রতা, সততা, ত্যাগ ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি অল্প সময়েই জেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। টানা দুই মেয়াদ ধরে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শিক্ষা ও ক্রীড়ানুরাগী হিসেবেও তার সমান পরিচিতি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের চেয়ারম্যান হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার সময়েই আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাফল্যের ধারা সূচিত হয়েছে।
গণমাধ্যমের সঙ্গেও তার ভালোবাসা অপার। অলাভজনক জেনেও প্রায় দেড় দশক আগে তিনি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশনার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। তার প্রকাশিত দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকা বর্তমানে সিলেট অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় ও বস্তুনিষ্ঠ পত্রিকা।