শেখ সাইফুল সিদ্দিকীঃ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় একটি মাইক্রোবাস (নোহা) এর ৫জন যাত্রী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আনুমানিক দুপুর ১.৪৫ মিনিটে আখাউড়া-সিলেট রেলপথের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা স্টেশনের পাশে সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসার গেইট এর পাশে এ দূর্ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের প্রতাবী গ্রামের আছকির মিয়া (৫০), তার ছেলে রিয়াদ আহমদ (৭), গুতগুতি গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে ফাহাত (১৫), মুজিব আলীর ছেলে তাহছিন (১৫), বাবুল মিয়ার স্ত্রী জলি বেগম (৪৫)। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
অপর আহত আছকির মিয়া ও তার ছেলে রিয়াদ স্থানীয় মুসলিম এইড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে গাড়ির চালক মোস্তফা মিয়া পলাতক রয়েছেন।
জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুতগুতি গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়ার মেয়ের সাথে ভাটেরা ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজগাঁও এলাকার বাসিন্দা মৃত সফর আলীর ছেলে ও মোঃ তাজুল ইসলামের ছোট ভাই পর্তুগাল প্রবাসীর বিয়ের কথাবার্তা বলার জন্য একটি মাইক্রোবাসে রওয়ানা দেন ১০জন যাত্রী।
অপরদিকে সিলেট থেকে বাবুল মিয়ার এক আত্মীয় আগে থেকেই ভাটেরা পুরান বাজারে এসে যাত্রীবাহি নোহা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ট্রেন দূর্ঘটনার আগমুহুর্তে গাড়ির চালক কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের নর্তন এলাকার মোস্তফা মিয়া ভাটেরা সাইফুল তাহমিনা আলিম মাদ্রাসার সামনে রেললাইনের ওপর তার গাড়িটি তুলে বাবুল মিয়ার ওই আত্মীয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় গাড়ির সামনের সিটে বসা ছিলেন প্রতাবী গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আজাদ মিয়া ও একই গ্রামের শফিক মিয়া। ওই সময় সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের শব্দ শুনে তারা এবং গাড়ির মাঝের সিটের যাত্রীরা গাড়ি থেকে দরজা খুলে নামতে পারলেও গাড়ির পেছনে থাকা যাত্রীরা তাৎক্ষণিক নামতে পারেননি। এসময় ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিয়ে ১৫-২০ ফুট দুরে ঠেলে নিয়ে যায়। এতে আহত হন গাড়িতে থাকা ৫ জন যাত্রী। তন্মধ্যে ৩জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
দূর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসের যাত্রী কুলাউড়া উপজেলার প্রতাবী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আজাদ মিয়া বলেন, বাবুল মিয়ার মেয়ের জন্য বর দেখতে ভাটেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। কিন্তু পথিমধ্যে আমাদের মাইক্রোবাসটি ট্রেন দুর্ঘটনায় কবলিত হলে ৫জন যাত্রী আহত হন। একমাত্র আল্লাহ পাকের মেহেরবাণীতে গাড়ির সামনের সিটে থাকা দুজন ও মাঝের সিটের যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। ট্রেনটি আমাদের মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এলাকার মানুষের সহায়তায় আহত ৫জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কুলাউড়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাকির হোসেন বলেন, আহতদের মধ্যে ৩জন কুলাউড়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের সিলেট ওসমানী হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। মাইক্রোবাসের চালকের গাফিলতির কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
কুলাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মিহির কান্তি দে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে কোন রেলক্রসিং নেই। নোহা গাড়ির চালক পলাতক রয়েছে। গুরুতর আহত ৩জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।