ডিজিটাল পদ্ধতিতে সারা দেশে সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ পত্র পেলেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বক্কর সিদ্দীক, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মানসম্মত শিক্ষার বড় একটি ধাপ হচ্ছে স্বচ্ছভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। আমরা এবার সরকারি বেসরকারি স্কুলে সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছি। একটা সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছামতো শিক্ষক নিয়োগ দিতো। সেটি নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যেত, সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি।
মন্ত্রী বলেন, গত দুই বছর আগের পিএসসি থেকে ২ হাজার ১৫৫ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হলেও ২ হাজার ৬৫ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পাওয়ায় তাদের নিয়োগপত্র দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৭৩ জনকে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়োগের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষক শূন্য পদগুলো অধিকাংশ পূরণ হবে। বাকি যেসব শূন্যপদ থাকবে সেখানে নিয়োগ দিতে নতুন আরো একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, এনটিআরসি’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন কাজ শেষ না হওয়ায় আপাতত তাদের শর্তসাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর কোন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে কাকে বাদ দেয়া হবে। নানা জটিলতার কারণে যারা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে তাদের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে। বড় আকারের এই শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে একদিকে শিক্ষক সংকট নিরসন হবে অন্যদিকে বেকারত্ব দূর হবে।
বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সকল কার্যক্রম বিপর্যয়ের মধ্যে থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল। সেই সুবাদে আজকে সারা দেশে একসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি ৩৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দিতে অনেক চড়াই-উতরাইসহ আইনি জটিলতা পেরিয়ে একসঙ্গে ৩৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগের পর সকল শিক্ষকের দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনে সেই মানসিকতা তৈরির আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের নিয়োগ করা ৫ জন প্রার্থী ও বেসরকারি স্কুলের নিয়োগ পাওয়া পাঁচ জন শিক্ষকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। বাকিরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাদের নিয়োগপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন বলেও জানানো হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান অবস্থায় ৩৪ হাজার ৭৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুপারিশপত্র ডাউনলোড করবেন। সুপারিশপত্রে উল্লিখিত তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাকি প্রার্থীদের মধ্যে চার হাজার ১৯৮ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভি রোল ফরম না পাঠানো, নয় জনের প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ হওয়া, তিন জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১০ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করে মহিলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চা শিক্ষক পদে আবেদন করার কারণে নির্বাচিত হননি। ফলে বিভিন্ন কারণে মোট চার হাজার ২১০ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি। যেসব প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি তাদের তালিকা এনটিআরসিএ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
যেসব প্রার্থী ভি রোল ফরম পাঠাননি তাদের আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এনটিআরসিএ অফিসে সরাসরি অথবা রেজিস্টার্ড ডাকযোগে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের প্রাথমিক নির্বাচন বাতিল করা হবে বলে জানানো হয়।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে গত দুই বছর আগে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে সুপারিশ করা হয়। পরে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে দুই বছর সময়ক্ষেপণ করা হয়। বর্তমানে সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় তাদের নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নিয়োগপত্র প্রদানকালে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, স্কুল শিক্ষক নিয়োগ প্রদানকারী এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তা প্রমুখ।