জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:
ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রকল্প ‘আশ্রায়ন প্রকল্পের’ উদ্বোধনের এক বছর পরও
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে শতাধিক উপকারভোগিরা ঘর পাননি। অন্যদিকে কোথাও আবারও ঘর মিললেও বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি পেলেন না এখনও।
ফলে সরকারের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩ সালের ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের আওতায় এ উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের বাদে খালীশা ও কলকলিয়া মৌজায় ৬৪টি, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে রসুলপুর মৌজায় ৩৮টি, রানীগঞ্জ ইউনিয়নে ২৫টি এবং পাইলগাঁও ইউনিয়নের খানপুর ও জালালপুর মৌজার ৮৫টিসহ মোট ২১২টি ঘরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই দিন আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন দেখানো হলেও প্রকল্পের ঘর তৈরিই হয়নি। দীর্ঘ এক বছর পর কেউ কেউ ঘর পেলও প্রায় শতাধিক পরিবার এখনো জমির দলিল বা ঘরের চাবি পাননি। অনেকেই আবার বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় পরিবার নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠছেন না।
এদিকে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার রানীগঞ্জ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলে মেয়েদের পড়া-লেখার অসুবিধা উল্লেখ্য করে জগন্নাথপুরের ইউএনও’র নিকট গুচ্ছ গ্রামের মাটি ভরাটের আবেদন করেন।
সরেজমিনে রানীগঞ্জ আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছ গ্রাম ঘুরে ও উপকারভোগিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশের মতো প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে এ উপজেলার ২১২টি ঘরের মধ্যে রানীগঞ্জে ২৫টি ঘর তৈরি করা হয়। এক বছর আগে ঘর তৈরি না করেই উদ্ধোধন দেখানো হয়। এ প্রকল্পের। পরে মাসখানিক আগে মৌখিকভাবে ২৫ পরিবারের মধ্যে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হলেও দেওয়া হয়নি জমির দলিল।
উপকারভোগিরা জানান, এক বছর পর ঘর পেলেও এখনো বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা হয়নি। কিছু অংশে মাটি ভরাটও রয়েছে বাকি। ফলে মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।
মিনতি রানী সরকার নামের এক উপকারভোগি বলেন, ২০ দিন আগে এ ঘরে এসেছি। আসার পর থেকে খুব কষ্টে আছি। পানির ব্যবস্থা না থাকায় অন্য জনের বাড়ী থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। আবার বিদ্যুৎ না থাকায় রাতের বেলা ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে ভয় হয়।
আরেক উপকারভোগি জয়নাল মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পরিবার এখানে আসছে না। ফলে ঘরগুলো খালি পরে আছে। খাওয়ার পানি আর বিদ্যুৎ যদি না থাকে ঘর দিয়ে কি হবে?
এদিকে, এক বছর আগে উদ্ধোধন হওয়া চতুর্থ পর্যায়ের ২১২টি ঘরের মধ্যে প্রায় শতাধিক ঘরের কাজ চলমান রয়েছে।
কলকলিয়া মৌজায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া বারিক মিয়া বলেন, এক বছর আগে ঘর দেওয়া কথা ছিল। ঘর কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো ঘর পাইনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ভূঞা জানান, রানীগঞ্জ প্রকল্পে আমাদের কাজ শেষ। বিদ্যুতের মেইন লাইনের খুঁটি দেওয়া হয়েছে। এখন যার যার খরচে ঘরের মধ্যে সংযোগ নিতে হবে। পানির বিষয়টি আমাদের নয় এটি জনস্বাস্থ্যের কাজ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, চতুর্থ ধাপের সব ঘরের কাজ প্রায় শেষ। কয়েকটি ঘরে রং এর কাজ চলছে। রানীগঞ্জ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে একটি লিখিত দরখাস্ত পেয়েছি। অচিরেই সভা ডেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব বিষয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সবার মধ্যে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করা হবে।