জগন্নাথপুরে যাতায়াতে যত দুর্ভোগ শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ১:০২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২৪ | আপডেট: ১:০২:পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২৪

 

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:

বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগে স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষা গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১ হাজার ৭শ’ ৩৮ জন। তবে এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা যাওয়ার যাতায়াতে চরম বিড়ম্বনায় পড়ছে॥

সম্প্রতিকালে দফা বন্যা পরিস্থিতিতে জগন্নাথপুরের গ্রামীন সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। গত কয়েকদিনে পানি কমলেও এখন সচল হয়নি সড়কগুলো। বন্যায় যোগযোযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হওয়ায় যান চলাচলে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে চলমান উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে অতিরিক্ত সময় যেমন লাগছে। একই সঙ্গে যাতায়াত ব্যয়ও বেড়েছে।

উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ষড়পল্লী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে জামালপুর গ্রামের দরিদ্র নাদিয়া বেগম। এই পরীক্ষার্থী জানালেন, ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে ওঠতে হয়। এরপর সকাল ৬টার আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে নৌকাঘাটে যাই। সেখান থেকে নৌকাযোগে উপজেলা সদরের পরীক্ষা হলে পৌঁছেছি সকাল ৯টার দিকে। যাতায়াত ভাড়া ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে। যাতায়াত ভোগান্তির পাশাপাশি সকালে আর পড়াশুনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্ষতি হচ্ছে লেখাপড়ার।

ষড়পল্লী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হারুনুর অর রশিদ বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী উপজেলা সদরে আত্মীয় স্বজনদের বাসা বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। অধ্যক্ষ জানান, পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে জগন্নাথপুর সরকারি কলেছে। কেন্দ্রে যোগাযোগের প্রধান সড়কটি হচ্ছে ভবেরবাজার-সৈয়দপুর-নয়াবন্দর ও কাঠাঁলখাই সড়ক। বন্যায় এ সড়কে যানবাহন চলাচলে অনুপযোগি হওয়ায় আমরা তিনটি ইঞ্চিল চালিত নৌকা ভাড়া করে ভোর ৬টায় কেন্দ্রের উদ্যেশ্যে রওয়ানা হলাম।সদরে পৌঁছে নৌকা রেখে একটি মিনিবাস ভাড়া করে সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। যাতায়াতে এক চরম ভোগান্তি পোহাত হয়।
শাহজালাল মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল আব্দুল মতিন বলেন, গ্রামীণ রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

সৈয়দপুর সৈয়দ সামছিয়া আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ রেজুওয়ান আহমদ বলেন, যোগাযোগ সড়কগুলো বন্যায় বিপর্যস্ত। যে কারণে চলাফেরায় অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েছে পরীক্ষার্থীরা। আমাদের মাদরাসা থেকে ৭৮ জন শিক্ষার্থী সদরের ইকড়ছই মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি বললেন, দুর্যোগপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে হলে যাচ্ছে। কখন পায়ে হেঁটে, আবার নৌকায় এবং ফের গাড়িতে করে চলাচল করতে হচ্ছে। একদিকে যেমন সময় লাগছে বেশি, অপর দিকে ভাড়ার খরছও বেশি লাগছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একাডেকিম সুপারভাইজার অরূপ কুমার রায় জানান, বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলোর অবস্থায় খারাপ থাকায় যোগাযোগে কিছুটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে পরীক্ষার শুরুর যথাসময়ে কেন্দ্রে তারা উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। তিনি জানান, এবার তিনটি কেন্দ্রে ও দুটি ভেত্যুতে পরীক্ষা চলছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অব্যাহত বৃষ্টিপাতে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জগন্নাথপুরে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার দুইশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এরমধ্যে উপজেলার শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়ক, পাটলী ইউনিয়নের লাউতলা-রসুলগঞ্জ সড়ক, কলকলিয়া ইউনিয়নের কামারখাল-চণ্ডীঢর সড়ক, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের ভবের বাজার-নয়াবন্দর সড়ক ও আশারকান্দি ইউনিয়নের নয়াবন্দর-দাওরাই সড়কসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়।।