মৌলভীবাজার তিন উপজেলার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার বুড়িকিয়ারি বাধসহ একাধিক কারণ

প্রকাশিত: ৭:৫৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২৪ | আপডেট: ৮:৩৯:অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২৪

মোঃ খালেদ পারভেজ বখশ:

 

দীর্ঘ দিন ধরে খননের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে সিলেট অঞ্চলের কুশিয়ারা, জুড়ি,ফানাই- আনফানাই নদী। স্রোতের তোড়ে নদীর পলিমাটি গিয়ে পড়ছে হাওরগুলোতে।

এই অবস্থায় নদী ও হাওরের পানিধারণের ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে উজান থেকে নেমে আসা মাত্রাতিরিক্ত পাহাড়ি ঢল।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পেছনে প্রাকৃতিক এই দুই কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট দুটি কারণকে সামনে আনছেন বিশেষজ্ঞ ও ভুক্তভোগীরা। তা হলো সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বুড়িকিয়ারিতে তৈরি বাঁধ ও ইটভাটা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অবহেলা ও গাফিলতি।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখায় ২০১৮ ও ২০২২ যে বন্যা হয়েছিলো এবং ২০২৪ যে বন্যা শুরু হয়েছে, তা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। মৌলভীবাজারের তিন উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী। ২০০৪ সালে এ রকম বন্যা হলেও তা অঞ্চলভেদে ১৫-২০ দিন স্থায়ী ছিল। ২০১০সালে ও বন্যা হয়েছিলো।

পরিবেশবাদীদের পর্যবেক্ষণ বলছে, কুশিয়ারা সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ উপজেলা হয়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে চলে গেছে। একইভাবে ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত জুড়ী নদী মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কুলাউড়া হয়ে হাকালুকি হাওর হয়ে সিলেটে ঢুকেছে। তাই ভারতীয় অংশে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই যৌথ এসব নদীর মাধ্যমে পানি বাংলাদেশে গড়িয়ে আসে।

পাউবো অফিসূএে জানাযায, ভারতীয় অংশে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে যৌথ নদীগুলো দিয়ে পানি বাংলাদেশে ঢুকছে। অথচ হাওরাঞ্চলে আগে থেকেই বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় পুরোনো পানি স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল।

পাউবোর তথ্য বলছে, প্রায় ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুশিয়ারার ১২০ কিলোমিটার পড়েছে সিলেট বিভাগে। এ নদীতে খুব বেশি চর না পড়লেও গভীরতা অনেকটাই কমে এসেছে। নদীটির অন্তত ৩৫-৪০ কিলোমিটার অংশ উভয় দেশের আওতাধীন থাকায় একাধিকবার খননের উদ্যোগ শুরু করেও শেষ পর্যন্ত নানা কারণে সফল হয়নি।

নাব্যতা-সংকটের পাশাপাশি তিনটি বিষয় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য দায়ী মনে করা হয়।
কুশিয়ারা নদীর যেসব স্থানে বাঁধ রয়েছে, সেগুলো যদি সংস্কারের পাশাপাশি নতুন বাঁধ নির্মাণ করা যেত, তাহলে বন্যার ভয়াবহতা এতটা বাড়ত না। মৌলভীবাজারে হাকালুকি হাওরের বন্যার পানিতে ভাসছে জেলার কুলাউড়া পৌরসভাসহ, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার হাওর-সংলগ্ন গ্রামগুলো। বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অনেকে। রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এই তিন উপজেলায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী।

 

 

এই দীর্ঘ সময়ে বন্যার জন্য অতিবর্ষণ ও উজানের ভারতীয় অঞ্চল থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পাশাপাশি হাকালুকি হাওর, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর ভরাট হয়ে যাওয়া, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের বুড়িকিয়ারিতে তৈরি একটি ক্রসবাঁধএবং সেখানে নির্মিত একাধিক ইটভাটাকে দায়ী করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পরিবেশকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া গেছে।

কুলাউড়া পৌরসভার মেয়রের উদ্দোগে ১৩ জুলাই শনিবার বন্যার কারন চিহ্নিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র,সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, প্রকৌশলীরা ফেঞ্চুগঞ্জের বুড়িকিয়ারি বাধসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

 

 

এ ব্যাপারে কুলাউড়া পৌর সভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন,প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর আয়তনের হাকালুকি হাওরকে ঘিরে আছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা। হাকালুকি ও কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থল ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার-সংলগ্ন বুড়িকিয়ারিতে পাউবো ২০০৬ সালে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। এই ক্রসবাঁধের কারণে হাকালুকি হাওরে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া এই এলাকায় একাধিক ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে, যার কারণে হাওরের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া হাকালুকি হাওরের পানি জুড়ী নদী হয়ে কুশিয়ারায় গিয়ে পড়ে। কিন্তু জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি হাওর থেকে বেরোতে পারছে না।
এনিয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে বিষযটি অবগত করবো ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতার নিরসনে কাজ করে যাবো।

 

কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. ফজলুল হক খান সাহেদ বলেন,
আগে হাকালুকি হাওর অনেক গভীর ছিল। অনবরত বৃষ্টি হলেও দুই দিনেও হাওর পানিতে ভরত না। এখন দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ভরে যায়। এ ছাড়া বুড়িকিয়ারির বাঁধ একটা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কুশিয়ারার মুখে ইটভাটা দিয়ে পানির গতি বাধাগ্রস্তসহ আরোও কিছু সমস্যা চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী বার বার বন্যার স্হায়ী সমাধানের জন্য বিভিন্নভাবে দাবি জানিয়ে সমস্যার সমাধান পাননি।