মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে সন্তানকে নতুন জীবন দিলেন মা

প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২ | আপডেট: ৭:২৯:অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২

জাহিদ হাসান। ২৪ বছরের টগবগে তরুণ। সদ্য স্নাতক পাস করেছেন। দুই চোখে স্বপ্ন- এই তো আর মাত্র ক’টা বছর। পড়াশোনা শেষে চাকরি করবেন। পরিবারের সহায় হবেন। দূর হবে দুঃখ।

হঠাৎ করেই জাহিদ হাসানের জীবনে ছন্দপতন ঘটলো। বিভিন্ন পরীক্ষার পর জানা গেলো তার দুটি কিডনিই বিকল। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন- জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প।

বিষয়টি পরিবারের সবাই অসহায়ভাবে মেনে নিলেও মা বুলি বেগম (৫৪) হাল ছাড়লেন না। বুলি বেগম জাহিদকে পৃথিবীতে এনেছেন, সেই পৃথিবী থেকে মায়ের আগে সন্তান চলে যাবে অকল্পনীয় মনে হলো তার কাছে। অথচ উপায় তখন একটাই- কিডনি প্রতিস্থাপন। বুলি বেগম হাসি মুখে রাজি হলেন। এখন মায়ের দেওয়া কিডনিতে নতুন করে জীবনের বাকি স্বপ্ন পূরণের দিন গুণছেন জাহিদ হাসান।

গত ২২ জানুয়ারি ঢাকার শ্যামলীতে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে মায়ের দেওয়া কিডনি জাহিদের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়ে। বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের কারণে কিছু শারীরিক জটিলতা থাকলেও মা ও ছেলে দুজনেই এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।

জাহিদ হাসানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঠেকরপাড়া গ্রামে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেছেন।

জাহিদের পরিবার ২০০৪ সাল থেকে লড়াই করছে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে। সে বছর ব্লাড ক্যানসারে মারা যান তার ছোট বোন। যথাসাধ্য চেষ্টা করে বহু অর্থ খরচের পরেও বোনকে বাঁচানো যায়নি। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০০৪ সালে জাহিদ বাবাকে হারান। তার বাবা ছিলেন বাসচালক। তারপর থেকেই পরিবারটি আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে জাহিদের অসুস্থতার সংবাদ পরিবারটিকে অকুলপাথারে ফেলে দেয়।

কথা হয় জাহিদের বড় বোন নূরনাহারের সঙ্গে। তিনি ঢাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নূরনাহার জানান, গত বছর ১৭ অক্টোবর তারা প্রথম জানতে পারেন- জাহিদের দুটি কিডনি কাজ করছে না। রংপুর ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে গত ৩ নভেম্বর সিকেডিতে ভর্তি করা হয় জাহিদকে। এরপর ২২ জানুয়ারি রাতে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার হয়।

নূরনাহার বলেন, ভেবেছিলাম ভাইকে বাঁচানো যাবে না। এখন আমি ভাইকে স্পর্শ করতে পারছি। ভাই চোখের সামনে সুস্থ জীবনের পথে হাঁটছে- এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আর মার কথা কী বলবো, মা তো মা-ই!

সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নূরনাহার বলেন, সব মিলিয়ে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ জন্য ৩০ শতাংশ জমিসহ পৈতৃক ভিটাটুকুও বিক্রি করতে হয়েছে। তাতে দুঃখ নাই।

 

দুঃখ জাহিদেরও নেই এমন মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন বলে। ‘ভালো আছি, নতুন করে জন্ম নিলাম পৃথিবীর বুকে। জগতজুড়ে একটাই মধুর নাম ‘মা’। কথাটি আজ বুঝতে পারছি।’ বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন জাহিদ।

চিকিৎসক যখন কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা বলেন, তখন দ্বিতীয়বার ভাবেননি বুলি বেগম। ‘যদি আমার সন্তান বাঁচে আমি রাজি’ এই ছিল তার শেষ কথা। এখন ছেলে কবে পুরোপুরি সুস্থ হবে সেই দিন গুণছেন এই মা। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে তিনি শুধু বললেন, ‘আমার ছেলের জন্য আপনারা দোয়া কইরেন।’