ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমা ব্যবহার করে রাশিয়ার সব ধরনের বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন এই ঘোষণা দিয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর বহু যাত্রীবাহী আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা রাশিয়ান মালিকানাধীন, রাশিয়াতে নিবন্ধিত এবং রাশিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যেকোন ধরনের বিমানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমা নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।
এখন থেকে এমন সব বিমান, এমনকি ধনীদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জেট ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোন দেশে অবতরণ করতে পারবে না, উড্ডয়ন করতে পারবে না এবং সেদেশ দেশগুলোর আকাশসীমার ওপর থেকে উড়েও যেতে পারবে না। যুক্তরাজ্য থেকেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর একের একের পর ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ার জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করছে। জার্মানি তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ান বিমানগুলোকে অনেক ঘুরে যাতায়াত করতে হবে এবং তাতে ফ্লাইটের সময় অনেক বেশি লাগবে। বাণিজ্যিক বিমানগুলো ইতিমধ্যেই ইউক্রেন, মলদোভা এবং বেলারুশের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে। প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্ত হিসেবে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানসংস্থা এরোফ্লোট বলেছে, তারাও ইউরোপগামী সব ফ্লাইট বাতিল করবে। পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।
দোমোদেদোভো এবং শেরেমেতইয়েভো, মস্কোর এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য প্রদর্শনকারী বোর্ডে প্যারিস ভিয়েনা ও কালিনগ্রাদগামীসহ কয়েক ডজন ফ্লাইট বাতিল দেখা যাচ্ছে। ব্রিটিশ বিমানের উপরেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার এস-সেভেন এয়ারলাইন্স ১৩ মার্চ পর্যন্ত তাদের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। মার্কিন বিমান কোম্পানি ডেল্টা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বুকিং-এর জন্য এরোফ্লতের সাথে তাদের যে চুক্তি রয়েছে, সেটি বাতিল করবে বলে জানিয়েছে। ব্রিটিশ কোম্পানি ভার্জিন আটলান্টিক বলেছে, রাশিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করতে না পারলে তাদের যুক্তরাজ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলাচলকারী বিমানের যাত্রার সময় ১৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মত বাড়বে। অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি কান্তাস বলছে, ডারউইন থেকে লন্ডনগামী ফ্লাইট চলাচল তারা রাশিয়ার আকাশসীমা এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘপথ ব্যাবহার করবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ইইউ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম স্পুটনিক এবং রাশিয়া টুডের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। এই দুটি সংবাদসংস্থাকে রাশিয়ার মুখপত্র হিসেবে মনে করা হয়।
তিনি জানান, আমরা তাদের বিষাক্ত, ক্ষতিকারক, ভুয়া তথ্য সম্বলিত খবর প্রচারের মাধ্যমগুলোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য ব্যবস্থা তৈরি করছি।
ওদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে গতকাল চতুর্থ দিন শেষে রাশিযার পারমাণবিক শক্তিকে বিশেষ সতর্কাবস্থায় রাখার জন্য রুশ সামরিক বাহিনীকে আদেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
যুক্তরাষ্ট্র একে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছে।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনীয় বাহিনী পুনর্দখল করেছে বলে কিয়েভ দাবি করেছে। ইউক্রেন সরকার বলছে তাদের সেনাবাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ও যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো লোকের সংখ্যা এখন ৩,৬৮,০০০-এ পৌঁছেছে।