সুনামগঞ্জে আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ‘তৃণমূলকে সংগঠিত করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন’
মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী,সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দলকে শক্তিশালী করতে হলে তৃণমূল নেতৃবৃন্দকে সুসংগঠিত করতে হবে। কারণ তৃণমূল তৃণমূলের শক্তিই হচ্ছে দলের মূল শক্তি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষতায় আনতে হলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে হবে।
রোববার (১৩ মার্চ) বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছনরাজা মিলনায়তনে প্রতিনিধি সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তৃণমূলকে ভালবাসেন, দেশের মানুষকে ভালবাসেন। দেশের মানুষেল মুখের দিকে থাকিয়ে জীবনকে বাজী রেখে, মৃত্যুকে জয় করে এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগের প্রয়োজনে নয়। দেশবাসীর উন্নয়নের জন্য।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যরিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, আওয়ামলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, শামীমা আক্তার খানম এমপি। জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়ার নাদের বখত, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহŸায়ক ইদ্রিছ আলী বীর প্রতীকসহ জেলা,উপজেলাও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
নাহিদ বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে হলে তৃণমূল নেতৃবৃন্দকে আরো সংগঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ২০১০ সালে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারের লক্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বিনামূল্যে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি দ্ররিদ্র দেশকে বিশে^র দরবারে একটি উন্নয়ন শীল দেশে পরিণত করা হয়েছে।
নানক বলেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দর। তিনি বলেন, উপজেলায় সম্মেলন হবে না, তাহলে কিসের জেলা কমিটি। এখন উপজেলা সম্মেলনে আমরা থাকব। দেখি কত ধানে কত চাল। উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে নানক আরও বলেন, আপনারা বেতন পান কি না ? যদি বেতন না-ই পান তাহলে ভাইদের পেছনে দৌড়ান কেন ? গ্রæপিং করেন কেন ? তিনি উপস্থিত সংসদ সদসদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ইউথ অল ইউ, সকলের আমলনামা তৈরী হচ্ছে, সকলের আমলনামা নেত্রীর কাছে পৌছে গেছে। আমলনামা দেখে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে নানক আরও বলেন, জেলায় রানীতি করনে আর মিটিং হবে ঢাকায়। এটি হতে পারেনা। হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ভাই-বন্ধুগণ আপনারই শেখ হাসিনা ভিত্তি। আপনাদের মুখের দিকে থাকিয়ে জীবনকে বাজি ধরে বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়েছেন। একমাত্র আপনাদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
হানিফ বলেন, দুই দুইটা বছর বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনায় বিপর্যন্ত ছিল। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমত করতে পারে নাই। যে কারণে এখনও বিশ্ববাজার স্থিতিশীল অবস্থায় নেই। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে যুদ্ধের প্রভাবেও বিশ্ববাজার অস্থিতিশীল। এর ঢেউ লেগেছে আমাদের দেশে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক স্বভাব রয়েছে। কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তারা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে আমাদের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ কষ্টের শিকার হন। এ ব্যাপারে আমাদের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নজরদারি করতে হবে। কেউ মজুদদারি করলে, অযৌক্তিক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাবেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিবে। সরকারকে বিপদে ফেলেবে, এমন কর্মকান্ড বরদাশত করা হবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে। যারা মজুদ করে তেলের দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি আগামীতে ৫০ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে। চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাড়ায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন আগামী জুন মাসের মধ্যেই জেলা সম্মেলন হবে এর আগে ইউনিয়ন ও উপজেলার সম্মেলন করা হবে। ঢাকা বসে কমিটি করা চলবে না।
আহমদ হোসেন বলেন, জীবনটাই একটা চ্যালেঞ্জ। আপনারা জানেন, জীবন যেমন চ্যালেঞ্জ তেমনি রাজনীতিও একটা চ্যালেঞ্জ। আজকে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনবার পার্টিকে পাওয়ারে এনেছেন। আপনারা এমপি হয়েছেন, কার জনপ্রিয়তায় বলুন। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। ইউথাাইট শেখ হাসিনা। আমরা সবাই জিরো পাওয়ার বাল্ব। আমরা এসেছি হাইপাওয়ার টেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। কেন এসছি ? কি ম্যাসেঞ্জ নিয়ে এসেছি। সামনে নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জেতার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে। গোতাগোতি বন্ধ করতে হবে। নৌকা আসতেছে যারা নমিনেশন পাবে সবাই মিলে নৌকাকে জেতাতে হবে। আওয়ামী লীগ পাওয়ারে থাকলে আমার নেতা, আপনার নেতা বাংলাদেশের নেতা সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতায় থাকলে ভাল থাকবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি সারা জীবন চাকুরী করেছি। এটা লুকানোর কোন বিষয় নয় বা ঢাকঢোল পিঠিয়ে বলারও কিছু নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে আসা, আওয়ামী লীগের নাম ও রাজনীতি আমার স্বপ্ন ছিল। আওয়ামী লীগ হৃদয়ে ছিল। এটা কোন সাক্ষীর প্রয়োজন নাই। আমি নিজেই সাক্ষী। তিনি আরও বলেন, ১৯৮৬ সালে আমি তখন ময়মনসিংহে চাকুরী করতাম নেত্রী তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন। এরশাদ সাহেব তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। নেত্রী বিরোধী দলীয় প্রধান হিসেবে ময়মনসিংহে যান। আমার কাছে তখন দেশের প্রধান রাষ্ট্রপতি টেলিফোনে কিছু বার্তাদেন। আমি সেদিকে ব্রæক্ষেপ করে তখন বিরোধী দলী নেত্রীকে যথাযথ সম্মান দিয়েছি। আমি মাত্র ৫ মিনিটি শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে কথা বলেছিলাম। এসময় আমি বলেছিলাম আমি আর চাকুরী করবো না। আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। এটা আমার জীবনের স্বপ্ন। তখন নেত্রী বলেছিলেন, না আপনি চাকুরীতে থাকবেন,আরও দীর্ঘদিন চাকুরী করবেন। এই যে বাংলাদেশের দুর্দশা দেখছেন এটা থাকবে না। আমার বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগে ফিরে আসবে। তখন আমার প্রয়োজন হবে সাহায্যকারির। তখন আমি আপনাকে ডেকে নেব।
আজিজুস সামাদ ডন বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে তুলে ধরেছেন, তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, আমার নেত্রী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে গড়ে তোলার জন্য জীবন-মরণ বাজি রেখে সকল ষড়যন্ত্রকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করে আজ বিশে^ যেভাবে বাংলাদেশকে গর্ব করে দাড়াতে শিখিয়েছেন। বাঙ্গালী জাতিকে উচ্চ শিখরে পৌছে দিয়েছেন। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যতই ত্যাগ স্বীকার করেন। আজকে যদি আপনার ক্ষমতায় না থাকতেন তাহলে আজ এখানে এত সুন্দরভাবে বৈঠক করতে পারতেন না। তিনি বলেন, আমরা যদি সংঘটিত না থাকি তাহলে আবার ফিরে যেতে হবে সেই কালো রাত্রিতে। তখন আপনার বঞ্চিত বলার সুযোগটাও পাবে না।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন,নোমান বখত পলিন, সৈয়দ আবুল কাশেম, যুগ্ম সম্পাদক অ্যডভোকেট নান্টু রায়, অ্যাডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান সিরাজ, শংকর চন্দ্র দাস, জুনেদ আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধ চৌধুরী বাবুল, সুনামগঞ্জ সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কালাম প্রমুখ।
প্রতিনিধি সভা শেষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জেলার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। জেলার নবসৃষ্ট মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে আগামী ৮ মে, ধর্মপাশা উপজেলা সম্মেল হবে আগামী ৯ মে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ও পৌরসভায় সম্মেলন হবে আগামী ১০ মে, শান্তিগঞ্জে ১২ মে, তাহিরপুরে ২৫ মে, ছাতক উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে আগামী ২৬ মে, দোয়ারাবাজার ২৭ মে, দিরাই উপজেলা ও পৌরসভা এবং শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ২৮ মে এবং জগন্নাথপুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২৯ মে এবং জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে আগামী ৩০ মে।
এর আগে সকাল ১০টায় প্রতিনিধি সভা শুরু হয়।