মিলানে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছে মিলান কনস্যুলেট

প্রকাশিত: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২২ | আপডেট: ৬:৪৪:অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২২

 

ইতালি প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, মিলান যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ৫১তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করে। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। অতঃপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। মিলানে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দিবসের আলোচনা পর্বটি ZOOM PLATFORM-এ সম্পন্ন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী পড়ে শোনানো হয়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র ‘১৯৭১’ প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনাপর্বে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তাঁরা বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে প্রথমে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের। তিনি বলেন , মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়ে যে বিতর্ক করা হয় তা নেহাৎ বাতুলতা মাত্র। গবেষণায় দেখা গেছে এ সংখ্যাটি প্রকৃত অর্থে আরো অনেক বেশী। তিনি ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রবাসীদের ভূমিকা রাখার আহবান জানান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের আরেক সহযোগী অধ্যাপক ড. মুরশিদা বিনতে রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণে জাতিকে অভ্রান্তভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ধীরে ধীরে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন যেন কোনভাবেই একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত না হয় সেজন্য তিনি সজাগ ও সতর্ক ছিলেন এবং সেভাবেই সংগ্রামের পটভূমি রচনা করছেন। তিনি বন্ধুরাষ্ট্র ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রশংসনীয় ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।

জনাব সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক) বলেন, বাঙালী বরাবরই বীরের জাতি, পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী বাঙালীদের নানাভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী, এই বাঙালীদের কাছেই তারা লজ্জাজনকভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস চর্চার আহবান জানান। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার ব্যাপারে বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে তোলার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জনাব মোঃ শাহাব উদ্দীন, এম.পি. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি তাঁর যৌবনের বেশীরভাগ সময় কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। কিন্তু তিনি স্থির লক্ষ্যে নিজের জীবন বাজী রেখে সারাজীবন বাঙালী জাতির মুক্তির কথা চিন্তা করেছেন এবং জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ১৯৭৫ সালে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও তাঁর আদর্শের মৃত্যু ঘটানো সম্ভব হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু আয়ের বিপুল বৃদ্ধি, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ অসংখ্য উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে সরকার নানা ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য প্রবাসীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

কনসাল জেনারেল জনাব এম জে এইচ জাবেদ আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহেণের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন তাঁদের তথ্যবহুল আলোচনার মধ্যদিয়ে আমরা বিপুলভাবে সমৃদ্ধ হয়েছি। বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন এবং সর্বোপরি অর্থনীতিকে উচ্চতর অবস্থানে নিয়ে যাবার মধ্যদিয়ে সরকার বঙ্গবন্ধুর অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন যে, প্রবাসী বাংলাদেশী এবং প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে মিলান কনস্যুলেট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান সরকারের কূটনীতির দু’টি প্রধান লক্ষ্য- যথা, অর্থেনৈতিক কূটনীতি ও জনকূটনীতি- বাস্তবায়নে তথা স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে এই মিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন প্রবাসী নেতৃবৃন্দ এবং প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মিলান কনস্যুলেট ভবিষ্যতেও আজকের মতো প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান আয়োজনে সচেষ্ট থাকবে।

পরিশেষে তিনি, দেশের উন্নয়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।