স্টাফ রিপোর্টারঃ
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগ্নিকান্ড মৃত অলিউরের লাশ এখন কুলাউড়ায়। তার বাবা নিকটাত্মীয়দের নিয়ে লাশ আনতে চট্টগ্রাম থেকে সোমবার সকালে তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। নয়নের মারা যাওয়ার ও লাশ আসার খবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলী গ্রামে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়-স্বজনরা বিলাপ আর আহাজারি করছেন। স্বজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে এসেছে। আজ সোমবার ৬ জুন ২টায় দীঘলকান্দি মাদ্রাসার সম্মুখে অলিউরের জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হয়েছে।জানাজায় বিপুল সংখ্যাক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে নিজ গ্রামে ফটিকগুলি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তরুণ ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। তার এই মৃত্যু কিছুতে মেনে নিতে পারছেননা ছোট ভাই-বোনসহ গ্রামের কেউই।
সোমবার (৬ জুন) সকালে অলিউরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অলিউরের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার মা-বাবা। পরিবারের কর্মক্ষম বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ তারা। স্বজনদের আহাজারিতেও আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। অলিউরের বাবা আশিক মিয়া কেঁদে কেঁদে বলেন, ছেলেটা সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়িতে আসে। কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যায়। অগ্নিকাণ্ডের দুই ঘন্টা আগে ছেলে ফোন করে জানায়, ছোট বোনের পড়ার খরচ হিসাবে এক হাজার টাকা পাঠালাম। কে জানতো আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে?
এলাকাবাসী জানান, ছেলেটা খুব নম্র ভদ্র স্বভাবের ছিল। তার এ অকাল মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছিনা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান তারা।
অলিউর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলী গ্রামের আশিক মিয়ার ছেলে। অলিউর রহমান। মায়ের দেওয়া নাম নয়ন। পরিবারের বড় সন্তান। বাবা দিনমজুর। সংসারে অভাব থাকায় পড়ালেখা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। সংসারের হাল ধরতে এলাকার বড় ভাইদের সহায়তায় চাকরি নেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কমটেইনার ডিপোতে। সেখান থেকে যা আয় করতেন পাঠিয়ে দিতেন বাবার কাছে।
জানা যায়, নয়নের মায়ের কয়েক বছর আগে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এরপর বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন মা ও বাবার সঙ্গেই বসবাস করতেন নয়ন। ফটিগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি ও কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এরপর সংসারে অভাবের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে চাকরিতে যায়। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করত। তাই দিয়ে সংসার চলত তাদের। অলিউরের সৎমা হাসিনা বেগম জানান, অলিউরের সঙ্গে ফোনে শনিবার দুপুর ২টায় সর্বশেষ কথা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে তার বাড়িতে আসার কথাও ছিল।
উল্লেখ্য, শনিবার (৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি নিজের ফেসবুকে লাইভ করছিলেন অলিউর রহমান নয়ন (২৩)। লাইভ চলাকালীন হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। কয়েক মিনিট পর লাইভও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ডিপোর বাইরে থাকা সহকর্মীরা খোঁজ করতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার রাত ১টায় নয়নের সহকর্মী রুয়েল বলেন, ও আমার সঙ্গে কাজ করে। আমরা একসঙ্গেই থাকি। কত করে বললাম আমাদের সঙ্গে বাইরে চলে আসতে। কিন্তু সে এল না। লাইভ করার জন্য আগুন লাগা কন্টেইনারের পাশেই
পাশেই থেকে গেল। আমরা নিজের প্রাণ বাাঁচাতে পাশের টিলায় গিয়ে আশ্রয় নিই
রোববার ৫ জুন দুপুর ১২টার দিকে রুয়েলের কাছে খবর আসে নয়নের ক্ষতবিক্ষত লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। রুয়েল জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা রওনা দেই চট্টগ্রামের দিকে। তার পরিবারের সবাই মৌলভীবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসছেন লাশ
নেওয়ার জন্য।
সীতাকুণ্ডের বিএম কমটেইনার ডিপোতে আগ্নিকান্ড মৃত অলিউরের লাশ নিয়ে কুলাউড়ায় চলে গেছেন ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, সীতাকুণ্ডে নিহত অলিউরের পরিবারকে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও অলিউরের পাশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থাকবে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন