সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান :
সুনামগঞ্জে পৃথক ধর্ষন মামলায় চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। বুধবার (৮ জুন) দুপুর সোয়া ১২টায় সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এদণ্ড প্রদান করেন।
একই মামলায় অপহরণের দায়ে আসামিদের ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং আরো ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। জরিমানার এক লাখ টাকা ভিকটিমকে ক্ষতিপুরণ হিসেবে প্রদানের নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।
যাবজ্জীবন দণ্ড প্রাপ্তরা হলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের মফিকুল ইসলামের ছেলে মনির মিয়া, একই গ্রামের আব্দুল হাসিমের ছেলে রুবেল মিয়া, আব্দুস ছালামের ছেলে শামীম মিয়া ও ছাতক উপজেলার দিঘলী চানপুর গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে রাজন মিয়া।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল ভিকটিম কিশোরী শিল্পী সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর থেকে গানের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে সুনামগঞ্জ শহরতলীর কুতুবপুর পয়েন্টে পৌছলে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় ভিকটিম ও তার গাসের ওস্তাদ ওই পয়েন্টের আম্বরের খালি চায়ের স্টলে আশ্রয় নেন। এসময় আমাসি মনির মিয়া, রুবেল মিয়া ও শামীম মিয়া একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের ওস্তাদকে মারপিট করে ভিকটিমকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তোলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাইক্রোবাসেই তিনজন পালাক্রমে ধর্ষন করে। এরপর মাইক্রোবাসের একটি চাকা নষ্ট হয়ে গেলে আসামিরা ভিকটিমকে পায়ে হেটে লালপুর বাজারের দিকে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে দুটি ব্রিজের নীচে ভিকটিমকে আরো দুইবার পালাক্রামে ধর্ষনের পর ভিকটিমের কাকুতি মিনতিতে আসামিরা লালপুর বাজারের মোহন মিয়ার মার্কেটের সামনের রাস্তা ছেড়ে দেয়। পরে ভিকটিমের বাবা ও মা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি কেেরন। এর পরদিন ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে আসামি মনির মিয়া, রুবেল মিয়া, শামীম মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। দীর্ঘ শোনানী শেষে সাক্ষী প্রমানের ভিত্তিতে আদালত মনির মিয়া, রুবেল মিয়া ও শামীম মিয়াকে ধর্ষনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অপহরণের দায়ে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভিকটিমকে দেয়া হবে। একই সঙ্গে জরিমানার ২০ হাজার টাকা অনাদায়ে অরো ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক।
অপরদিকে, জেলার ছাতক উপজেলার দিঘলী চানপুর গ্রামে তাজ উদ্দিনের ছেলে রাজন মিয়া গ্রামের এক মাদ্রাসার ছাত্রীকে মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে প্রায়ই উত্যক্ত করত এবং কুপ্রস্তাব দিত। এ কারণে ছাত্রী মাদ্রাসায় যাওয়া আসা বন্ধ করে দেয়। পরে ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই ছাত্রী প্রস্রাব করতে বসত ঘর থেকে বের হয়ে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামি রাজন ছাত্রীকে মুখ বেধে জোর পূর্বক অপহরণ করে বাড়ির পাশে তকিপুর মাইজুলের খালি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষন করে। পরে ওই ছাত্রী বাড়ি ফিরে তার বাবা ও মাকে বিষয়টি জানালে বাবা-মা তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভিকটিম চিকিৎসা শেষে রাজন মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি রাজন মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। সাক্ষী প্রমানের ভিত্তিতে আদালত আসামি রাজন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অপহরণের দায়ে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভিকটিমকে দেয়া হবে। একই সঙ্গে জরিমানার ২০ হাজার টাকা অনাদায়ে অরো ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক।
রায় ঘোষনাকালে আদালতের উপস্থিত ছিলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নান্টু রায়, সিনিয়র আইনজীবী মল্লিক মঈন উদ্দিন সুহেল, রফিকুল আলমসহ সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবীগণ, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীসহ গণমাধ্যম কমীগণ।