জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো লাখো মানুষ ঘর-বাড়ী ছাড়া। এসব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতন জীবন যাপন করছেন। এরমধ্যে বন্যার পানিতে স্রোতের কবলে পরে উপজেলার এরালিয়া গ্রামের ফল ব্যবসায়ী আনহার মিয়া মারা গেছেন। জগন্নাথপুরের ইকছগাঁও গ্রামের সানুর মিয়া নামের এক বৃদ্ধ বন্যার তোড়ে ডুবে গত দুইদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। আজ শুক্রবার পর্যন্ত তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কবর দেওয়ার মাটি না পেয়ে পানিতে লাশ ভাসিয়ে দিচ্ছেন স্বজনরা। এছাড়া জগন্নাথপুর-সিলেট সড়ক, জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের সব কটি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এছাড়া আংশিক কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে গত ৯ দিন ধরে বিদ্যুৎ চালু করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলার সদরে পানি কমতে শুরু করলেও উপজেলার নিন্মাঞ্চলের হাজার হাজার বাড়ী-ঘরে এখনো উরু থেকে হাটু সমান পানি রয়েছে। উপজেলার সদরের প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র জগন্নাথপুর বাজারের বিভিন্ন গলি পানিতে তলিয়েছে। বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ পৌছে দিতে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি প্রবাসী, বিত্তশালী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কাজ করছে। তবে সরকারী ত্রাণ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল রয়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরএলাকার ইকড়ছই, ভবানীপুর, খালিকনগর, আলখানাপাড, মোমিনপুর, হাসিনাবাদসহ জগন্নাথপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের সিংগভাগ মানুষের বসতঘরে পানি উঠে যাওয়ায় বাড়ীঘর তালাবদ্ধ রেখে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে ও উঁচু স্থানে উঠেছেন। ফলে অসংখ্যা গ্রাম লোক শুন্য হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের গোলার ধান, চাল।
পৌরএলাকার মোমিনপুর এলাকার দরিদ্র আব্দুল মনাফ জানান, গত শুক্রবার হঠাৎ করে ঢলের পানি বসতঘরে প্রবেশ করে ধান, চাল ভাসিয়ে নিয়েছে। বুক সমান পানি ঘরে থাকায় কোনভাবে পরিবারের লোকজন নিয়ে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নিয়েছি। গত ৮ দিন ধরে বাড়ী ছাড়া।এখনো ঘরে উরু সমান পানি রয়েছে। নানা অভাব অনটনে আছি।
নলুয়া হাওর ব্যস্টিত চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ইউনিয়নের সর গ্রামের বাড়ী-ঘরে পানি। শ’ শ’ পরিবার এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগের শেষ নেই মানুষের। বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা পৌছে নিতে আমরা কাজ করছে। তবে ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে ৯৩ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আমরা একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে একজন করে ট্যাগ অফিসারের উপস্হিতিতে স্থানীয় জমপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়েছি। আমিওনিজেও প্রতিদিন দুর্গতের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ করছি।