কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের পর যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে, তা নতুন আইনের অধীনেই হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে উত্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে বলেও জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। এর আগে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোন আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোন আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই।
‘তবে সাংবিধানিক চেতনা সমুন্নত রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ধারণের লক্ষেই মূলত এই আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে যে কোনো আইন হবে সাংবিধানিক বিধান মতে একটি বিশেষ ধরনের আইন।’
তিনি বলেন, এই বিশেষ ধরনের আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে ২০১২ এবং ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুই বারই দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এই অনুশীলনে অংশগ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, এই রীতিটির আলোকে এবং এই প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।’
সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে ইসি গঠনে আইন মন্ত্রণালয় আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, খসড়াটি মন্ত্রিসভায় সোমবার উপস্থিত হয়েছে। নীতিগতভাবে উত্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে। খসড়া আইনটি যথাযথ আনুষ্ঠানিকতায় সম্পূর্ণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক আইন মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদে পাঠাবে। জাতীয় সংসদ প্রচলিত আইন বিধিবিধান অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সময়ের কারণে আইন করা সম্ভব না হলে ইসি গঠনে বিকল্প কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিকল্প কোনো দফা নিয়ে ভাবার অবকাশই নেই। কেউ কোনো প্রক্রিয়া ফলো করতে পেরেছে বা প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে পেরেছে, কেউ পারেনি। কেউ নির্দিষ্ট সময়ে পারেনি বা পেরেছে, এটা হতে পারে। অন্য কিছু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
‘হাতে অল্প সময় এর মধ্যে আইন করা সম্ভব কিনা’- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাম অ্যান্ড সি, নাথিং ইজ ইম্পসিবল’
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠকে আরো কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।
সেগুলো হচ্ছে, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সকল নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
তিনি আরো জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির নিকট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে দলের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। আওয়ামী লীগ-এর প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন ও সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় এবং এই ধরনের অর্থবহ সংলাপ আহ্বানের মধ্য দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির গৃহীত যে কোন ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে।
বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।