সুনামগঞ্জের বন্যায় আউশ ও সবজিতে শত কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশিত: ১২:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২২ | আপডেট: ১:১৩:অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২২

 

মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জে ২৮ হাজার ৭৬৫ জন আউশ ধান ও ১৫ হাজার ১৭৯ জন সবজি চাষীর একশত ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধান চাষীদের ক্ষতি হয়েছে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং সবজি চাষীদের ক্ষতির পরিমান দাঁিড়িয়েছে ৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকার। যা স্মরণকালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গত ১৬ জুন থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় এবং চেরাপুঞ্জির ঢলে জেলার প্রতিটি বসত বাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ফলে জেলার আউশ ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় এবার ২৮ হাজার ৭৬৫ জন কৃষক ১২ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করেন। এরমধ্যে ১১ হাজার ৪০৩ হেক্টর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৭ হেক্টর আউশ জমির ধান। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া জেলায় ১৫ হাজার ১৭৯ জন ২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষী করেছেন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৬৫ হেক্টর এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
১ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমির সবজি। যার মূল্য দাঁিড়য়েছে ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামের আউশ চাষী আব্দুল খালেক জানান, তিনিসহ গ্রামের ২০ জন মিলে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২৫ কেদার জমিতে (৩০ শতাংশে এক কেদার) আউশ ধান চাষ করেছিলেন। সর্বনাশা বন্যায় চাষকৃত আউশ ধান ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি অরো জানান, প্রতি কেদার জমিতে কমপক্ষে ১৫ মণ করে ধান ফলতো। তিনি জানান, তার সব ফসল বন্যার পানিতে চলে গেছে। এখন তাদের প্রণোদোনা দিয়ে আগামীতে ফসল ফলিয়ে দেশের খাদ্য উদৃত্বে অবদান রাখার সুযোগ দানের আহŸান জানান।
ছাতক উপজেলা সাউদেরগাঁও গ্রামের আউশ ধান চাষী মজম্মিল খান জানান, তিনি এবার এক একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন। বন্যায় তার ধান ক্ষেত ডুবে গেছে। বর্তমানে জমিতে অন্তত ৫ ফুট পানি রয়েছে। তিনি অরো জানান, এবারের মতো বন্যা আর দেখেননি।

দিরাই উপজেলার সবজি গ্রাম খ্যাত রাধানগর গ্রামের সবজি চাষী আলেয়া বেগম মানবকণ্ঠকে জানান, তিনি দুই কেদার জমিতে চালকুমড়া, চিচিংগা, করলা ও ঝিংগা চাষ করেছিলেন। তিনি অরো জানান, বন্যার পানিতে তার বসত ঘরের অনেক আসবাবপত্র ভেসে গেছে। শুধু সবজিতেই তার দুই লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি অরো জানান, তাদের গ্রামে বর্তমানে ২শত চাষী সবজি চাষ করেছেন। সরকার তাদের প্রণোদোনা দিলে আগামীতে ফসল ফলিয়ে সরকারের রাজস্ব ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। একই গ্রামের বড় সবজি চাষী সুরুজ আলীর ছেলে রাজু জানায়, তার বাবা এবার প্রায় তিন একর জমিতে সবজি চাষ করেছিলেন। বন্যায় সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।

বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের সবজি চাষী রবিউল আউয়াল জানান, তিনি এবার দুই দেকার জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করেছিলেন। বন্যায় তার ক্ষেতের সব সবজি নষ্ট হয়েগেছে। তিনি কমপক্ষে দুই লাখ টাকা সবজি বিক্রি করতে পারতেন।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, জেলায় ৫০ হাজার আউশ ধান চাষী রয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬৫ জন আউশ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ৭ হাজার ৫৭০ কৃষককে প্রণোদোনা আমন ধানের বীজ ও সার দেয়া হবে। যাতে তারা রোপা আমন ধান চাষ করে আউশের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে।