বন্যায় ভেসে গেছে সব, ১৭ দিনেও সহায়তা জোটেনি সুরমার

প্রকাশিত: ১:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২২ | আপডেট: ১:১৩:পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২২

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি::

বিকেল ৫টা। বাড়িতে সুরমা বেগম আর তাঁর কোলের শিশু ও তিন বছরের সন্তান ছাড়া কেউ নেই। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে। মাঝেমধ্যে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। এরই মধ্যে বসতঘরে হাঁটুপানি উঠে গেছে। ভয়ে সুরমার গলা শুকিয়ে আসছে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। হঠাৎ বৃদ্ধ শ্বশুরকে নৌকা নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দেখে প্রাণ ফিরে পান। দুই শিশুসন্তানসহ শ্বশুরের সঙ্গে নৌকায় করে চলে যান আশ্রয়ের খোঁজে। ঘরের কোনো জিনিস নিতে পারেননি। ফলে বন্যায় সেসব ভেসে যায়।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের উত্তর নাদামপুর গ্রামে পরিদর্শনের সময় এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবে গত ১৭ জুনের ঘটনার বর্ণনা দেন সুরমা বেগম (২৫)। তিনি উত্তর নাদামপুরের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। গত কয়েক দিনে ঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় গতকাল রবিবার তিনি শ্বশুরকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি দেখতে এসেছিলেন।

 

দরিদ্র পরিবারের সুরমা জানান, এই দুর্যোগের মধ্যে গত ১৭ দিনেও কোনো সহায়তা পাননি। কষ্টে চলছে জীবন। বাড়ি মেরামত নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

সুরমা বেগম বলেন, শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে বাড়ির আঙিনায় পানি প্রবেশ করে। এর কিছুক্ষণ পরে বসতঘরে ঢুকে যায়। স্বামী তখন উপজেলা সদরের জগন্নাথপুর বাজারে। স্বামীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাঁকে পাননি। কারণ তখন নেটওয়ার্ক ছিল না। বাড়িঘরে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুরমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। হঠাৎ দেখতে পান শ্বশুর বৃষ্টিপাতের মধ্যে খোলা একটি নৌকা নিয়ে বাড়িতে ঢুকছেন। ঘরের সব কিছু রেখে শ্বশুরের সঙ্গে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয়ের জন্য চাচাশ্বশুরের বাড়িতে চলে যান সুরমা।

সুরমা জানান, বন্যার পানিতে ঘরের মেঝে, চেয়ার-টেবিল, হাঁড়ি-বাসন, বালিশ, বিছানাপত্র, আসবাস ভেসে গেছে। বন্যায় বসতবাড়ির বেড়ার টিন, বাঁশের পালাসহ (খুঁটি) ঘর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

সুরমার স্বামী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জগন্নাথপুর বাজারে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি কোনোভাবে। বন্যা আমার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে।’

তিনি জানান, বসতঘর থেকে পানি নামলেও আঙিনায় এখনো রয়েছে।