ষ্টাফ রিপোর্ট : পুনরিজ্জীবিত হচ্ছে পঁচাত্তুর বছরের পুরাতন সংগঠন বার্মিংহাম বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। ঘোষনা করা হয়েছে নতুন নেতৃত্বের জন্য ভোটার নিবন্ধন এবং র্নিবাচনী প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা নিস্ক্রিয় থাকা একসময়কার জমজমাট সংগঠন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনে কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে সংগঠনের নেতৃত্বে বদলের ঘোষনায় বার্মিংহামের বাঙালী কমিউনিটির মধ্যে শুরু হয়েছে নানা উৎসাহ উদ্দীপনা। গত কয়দিন ভোটার নিবন্ধিত হতে সংগঠনের কার্যালয়ে ভীড় জমিয়েছেন অসংখ্য প্রবাসী বাঙালী। ইতিমধ্যে কমিউনিটি নেতা আলহাজ¦ কামরুল হাসান চুনু,এম এ খালিক ও আব্দুল রশীদকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে বাঙালীদের অতি প্রাচীনতম এই সংগটনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোট ৯৪৭ জন ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন ভোট প্রদানের জন্য। যদিও সর্বশেষ ২০০১ সালে হওয়া নির্বাচনে প্রায় সাত হাজার সদস্য ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হলেও এবারের সংখ্যাটি অনেকটা কম। অবশ্য সে সময় কমিউনিটির মানুষদের জন্য সংগঠনটির প্রয়োজনীয়তা এবং শাপলা,পাল্লা,জাগরণ,বই,চা-পাতা,ঘড়ি,সবুজ বাংলাসহ ৭টি প্যানেলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় সেসব প্যানেল থেকে প্রচুর সদস্য সংগ্রহ ও ভোটার নিবন্ধন করার কারণে সাত হাজারের মতো ভোটার নিবন্ধিত হয়েছিলেন। সেরকম ঝাকঝমকতা না থাকলে তবুও প্রাণ ফিরে পেতে যাওয়া বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নির্বাচন নিয়ে বার্মিংহামের বাঙালী অধ্যুষিত এলাকার রেষ্টুরেন্ট আর আড্ডাগুলোতে বেশ রমরমা আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে। অধিকাংশরাই মনে করছেন এবারো বেশ ক‘টি প্যানেলে নির্বাচন হবে এবং জমে উঠবে প্রতিদ্ধন্ধিতায়।
বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের রয়েছে দীর্ঘ এক ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের শুরু করতে হলে যেতে হবে অনেক পেছনে। বৃটেনে বাঙালীদের বসবাস শুরুর শতাব্দি ছুঁেয় গেছে বেশ আগেই। বিভিন্ন নামী দামী ফ্যাক্টরী প্রতিষ্টান থাকায় চাকুরীর নানা সুবিধার কারণে বৃটেনের মধ্যভূমি হিসেবে খ্যাত বার্মিংহামেই একসময় বাঙালীদের বসবাস ছিলো সর্ব্বোচ্চ। পরবর্তীতে নানা কারণে সেসব প্রতিষ্টান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং বাঙালীরা ক্বারী শিল্পের নেতৃত্বে চলে আসায় অনেকেই লন্ডনসহ পাড়ী জামান নানা শহরে। তবে বাঙালীরা যেখানেই গেছে সংগঠিত হয়েছে প্রতিষ্টা করেছে নানা সংগঠনও। তেমনি প্রায় ৭৫ বছর আগে ১৯৪৭ সালে বার্মিংহাম ও তার পাশর্^বর্তী এলাকায় থাকা প্রবাসী বাঙালীরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য ভ্রাতৃত্ব পারস্পরিক সহযোগিতা সর্বোপরি নতুন আসা বাঙালীদের নানা আইনগত সহযোগিতা ও সমর্থনের লক্ষ্যে গঠন করেছিলো বেঙ্গল ব্যুরিয়ল সোসাইটি যা পরবর্তীতে পুর্ব পাকিস্থান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন হিসেবে নাম ধারন করে। যার অফিস প্রথমে স্থাপন করা হয়েছিলো বার্মিংহামের স্পার্কহীলের ওয়েলফোর্ড রোডে এবং পরে সটলী এলাকার আলমরক রোডে স্থানান্তরীত করা হয়। প্রতিষ্টলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হতো বাঙালীদের সকল সভা সমিতিসহ অধিকাংশ কার্যক্রমই। বিশেষ করে দেশ থেকে আসা ইংরেজী না জানা প্রবাসী বাঙালীদের কাউন্সিলের নানা কাগজপত্র বিষয়ে সহযোগিতার একমাত্র ভরসাস্থল ছিলো বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। সংগঠনের বিপুল অংকের ফান্ড থাকায় সেখানে অভিজ্ঞ কয়েকজন ষ্টাফকেও নিয়োগ দেওয়া হতো। অবশ্য পরবর্তীতে বৃটেনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম বেড়ে উঠায় এসব অফিসিয়াল কাজ-কর্ম পরিবারের সদস্যরাই করে ফেলতে পারায় সংগঠনটির কার্যালয় অনেকটা ভীড়শুন্য হয়ে পড়ে। কার্যক্রম স্থবির থাকায় বিভিন্ন ফান্ড দাতা সংগঠনগুলোও ফান্ড প্রদান বন্ধ করে দেয়। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনসহ নেতা-নেত্রীদের সভা সমাবেশের স্থান ছিলো বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ঐ সংগঠনকেন্দ্রীকই। একাত্তুরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এই প্রতিষ্টানটির বেশ গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা ছিলো। বিভিন্ন সময়ে এই সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন বিভিন্নজন। প্রথমদিকে কমিউনিটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আলোচনার মাধ্যমে এর পরিচালনা কমিটি গঠন কার রীতি থাকলেও একসময় নির্বাচনের মাধ্যমেই বদল হতো নেতৃত্ব। সাবেক সভাপতি এম এ খালিকের তথ্যানুযায়ী সর্বশেষ ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো বার্মিংহাম বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নির্বাচন। তবে সংশ্লিষ্ট অন্য একজন জানিয়েছেন এর আগে ২০০০ সালে একটি নির্বাচন হলেও একটি পক্ষের অভিযোগ অনুযোগের কারণে চ্যারিটি কমিশনের নির্দেশে এক সময় সংগঠনের কার্যালয় বন্ধ রাখতে হয় এবং পরবর্তীতে আরেকটি নির্বাচন হয় ২০০১ সালে। সেসময়ে সরাসরি ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হওয়া সভাপতি আব্দুল খালিক বাংলা কাগজকে ২০০১ সালে সর্বশেষ নির্বাচন বললেও বর্তমান সভাপতি হরমুজ আলীর রয়েছে ভিন্নমত। তিনি জানান,সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে এবং তখন কোনো প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থী না থাকায় তাকে সভাপতি ও ওয়ালী মুক্তাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষনা করেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন আবারো এসেছে ; নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে আবারো তোড়জোর। তবে নির্বাচনে যারাই বিজয়ী হবেন তাদেরকে যেনো সবাই মেনে নেয় ; আর যেনো কোনো অভিযোগ অনুযোগ না থাকে এই অনুরোধ জানিয়েছেন বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে থাকা হরমুজ আলী।