ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য নতুন একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানিয়ে দিল্লিতে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) নামে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই বিষয়ে নয়াদিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন দিল্লির উত্তরের অপেক্ষায় ঢাকা। চিঠির জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক চুক্তি হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়বে বলে মনে করে সরকার। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সিইপিএ কার্যকর করতে চলতি মাসে বেশ কয়েকটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও সভা করবে।
তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে ঘোষণা দেওয়া তাদের যৌথ বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আলোচনা শুরু করতে বলেছেন। তবে এ বিষয়ে নয়াদিল্লি থেকে এখনো কোনো চিঠি আসেনি। এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা অনেক বড় বিষয়। বাংলাদেশ অতীতে এ ধরনের কোনো চুক্তি করেনি। উভয় পক্ষই এখন বিষয়টি এগিয়ে নিতে কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এবং সেক্টরাল সাব-কমিটি গঠন করবে। সিইপিএ চুক্তিটি সম্পন্ন করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সিইপিএকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) একটি উন্নত সংস্করণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভারত ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে।
দক্ষিণ এশীয় এই দুটি দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ২০১৮ সালে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিইপিএ-এর সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলোচনা করে। পরে একই বছর, উভয় দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা বিষয়টি নিয়ে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে সম্মত হন।
পরবর্তীতে সেন্টার ফর রিজিওনাল ট্রেড অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট যৌথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে নিজ নিজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। যৌথ সমীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার পর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে এলডিসি অবস্থা থেকে উত্তরণের পরে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) অধীনে বাংলাদেশ যে সুবিধা ভোগ করেছে তা ধরে রাখতে ভারতের সঙ্গে সিইপিএ স্বাক্ষর করা যেতে পারে।
সিইপিএ-এর লক্ষ্য বাণিজ্য জটিলতা, শুল্ক, সরকারি ক্রয়, বিনিয়োগ, একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ সুরক্ষা, অন্যান্য বিষয়গুলো মোকাবেলা করা। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করার বিভিন্ন জটিলতা দূর করতেও এটি একটি বৃহৎ আকারের উদ্যোগ।
সিইপিএ সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকরা ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের সুবিধা অনুযায়ী চুক্তিটি বেছে নিতে পারবে। বর্তমানে, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (এপিটিএ) সদস্য হলেও ব্যবসায়ীরা সাফটা পছন্দ করেন। কারণ এর উপকারিতা বেশি। একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ অ্যালকোহলযুক্ত এবং নন-অ্যালকোহলিক পানীয়ের (সাফটা দ্বারা এনটাইটেলড) বিভাগের অধীনে ২৫টি পণ্য ছাড়া ভারতে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ উপভোগ করে। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার পর ভারতের কাছ থেকে এসব সুবিধা হারাবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জন করেছে; এটি পূর্ববর্তী সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এবং পণ্য রপ্তানিতে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার মাইলফলক অর্জন করেছে, যা আগের আর্থিক বছরের তুলনায় ৮১ শতাংশ বেশি। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ১ হাজার ৬১৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।