সুনামগঞ্জ ব্যুরো প্রধান :
সুনামগঞ্জে পৃথক ধর্ষণ মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। জরিমানার টাকা ক্ষতিপুরণ হিসেবে ভিমটিকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের আলী নূরের ছেলে আনোয়ার হোসেন (খোকন), তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে শয়ফুল্লা ওরফে শফি উল্লাহ, একই গ্রামের জাবেদ মিয়ার ছেলে ছাইদুর রহমান, আব্দুল মজিদের ছেলে সফিকুল ও ছাতক উপজেলার মোহনপুর গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে ইকবাল হোসেন। এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন (খোকন), শয়ফুল্লা ওরফে শফি উল্লাহ, ছাইদুর রহমান ও সফিকুল তাহিরপুর উপজেলার শাহ আরেফিন এলাকায় আখ ক্ষেতে এনজিওকর্মীকে গণধর্ষণ মামলার আসমি এবং ইকবাল হোসেন ছাতক উপজেলার মোহনপুর গ্রামের এক কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণ মামলা আসামি।
এছাড়াও জেলার দিরাইয়ে বাসে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় বাসচালক শহিদ মিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদÐ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন একই আদালতের বিচারক। জরিমানার টাকা ভিকমিটকে দেয়ার নির্দেশ ও দিয়েছেন আদালত।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ৩১ আগস্ট জেলার বিশ^ম্ভরপুর উপজেলায় একটি এনজিও সংস্থারকর্মী দুপুর ১২টার দিকে বিশ^ম্ভরপুর থেকে বাড়ি ফেরার পথে অনোয়ার হোসেন নামের এক যুবক জোরপূর্বক তার মোটরসাইকেলে তুলে তাহিরপুর উপজেলার শাহআরেফিন মোকাম এলাকায় নিয়ে যায়। দুপুর আড়াইটার সময় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পাশর্^বর্তী আখ ক্ষেতে নিয়ে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এসময় আশে-পাশে থাকা আনোয়ার হোসেন (খোকন), শয়ফুল্লা ওরফে শফি উল্লাহ, ছাইদুর রহমান, সফিকুল, সেলিম, অনোয়ারুল আজিম, মাফিনুরসহ আরো ৪জন আনোয়ার হোসেন খোকনকে বেধে ওই এনজিও কর্মীকে গণধর্ষণ করে। ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। পরে ওই এনজিওকর্মী তাহিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। আদালত সাক্ষী প্রমান শেষে আনোয়ার হোসেন (খোকন), শয়ফুল্লা ওরফে শফি উল্লাহ, ছাইদুর রহমান ও সফিকুল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা ভিকটিমকে ক্ষতিপুরণ হিসেবে দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। আসামি সেলিম, অনোয়ারুল আজিম, মাফিনুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত ।
সূত্র আরো জানান, ২০১২ সালের ১৭ মার্চ ছাতক উপজেলার মোহনপুর গ্রামের এক কিশোরীকে একই গ্রামের মশাহিদ আলীর ছেলে ইকবাল হোসেন অপহরণ করে ধর্ষণ করে। এতে গ্রামের মৃত মছদ্দর আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীন অপহরণে সহায়তা করার ঘটনায় ভিকটিমের চাচা বাদী হয়ে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। সাক্ষ্য প্রমান শেষে আদালত ইকবাল হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদÐ এক লাখ টাকা জরিমানা প্রদান করেন এবং আসামি জয়নাল আবেদীনকে ১৪ বছরের কারাদÐ ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে অতিরিক্ত ৩ মাসের কারাদÐ প্রদান করেন।
২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বের দিরাইয়ের কিশোরী সিলেটের লামাকাজি থেকে দিরাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে উঠে। বাসটি দিরাই রাস্তায় এসে যাত্রী শূণ্য হয়ে পড়ে। ওই কিশোরী বাসে একা থাকায় বাসের চালক শহিদ মিয়া হেল্পারের কাছে স্টিয়ারিং দিয়ে কিশোরীকে জোরপূর্ব ধর্ষণের ধর্ষণ চেষ্টা করলে ওই কিশোরী চলন্ত বাস থেকে ঝাপ দেয়। পরে আশে-পাশের লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে ওই কিশোরী দিরাই থানায় বাসের চালক শহিদ মিয়া ও হেল্পার রশিদ আহমদের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় মামলায় মামলা দায়ের করেন। সাক্ষ্য প্রমান শেষে আদালত বাস চালক শহিদ মিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এবং হেল্পার রশিদ আহমদকে খালাস প্রদানের আদেশ দেন। একই সঙ্গে জরিমানার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভিকটিমকে দেয়ার নির্দেশ দেন।