দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ খুলছে রানীগঞ্জ সেতুর দুয়ার
স্বপ্ন পূরণ সুনামগঞ্জবাসীর
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতুর দুয়ার খুলছে। সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম এ সেতুটি জেলার জগন্নাথপুরের কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করবেন। আর এরই মধ্যদিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এতে করে জগন্নাথপুর উপজেলাসহ জেলাবাসীর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণের কাজ গত অক্টোবর মাসে শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর চলবে সকল ধরণের পরিবহন।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি (আব্দুস সামাদ আজাদ) আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর ওপর রানীগঞ্জ সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট। ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু ও আড়াই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং টুল প্লাজার নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২৪ বি এবং এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এমবিইএল। চুক্তি অনুযায়ী ৭০২ দশমিক ৩২ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থ সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৬ বছরে এসে শেষ হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুটির নির্মাণ কাজের প্রকল্প নকশা সংশোধন ও করোনা পরিস্থিতির জন্য এই বিলম্ব হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি ছিল কুশিয়ারা নদীর ওপর রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণের। যা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেতুটিতে যানবাহন চলাচলে সুনামগঞ্জ জেলাশহর থেকে রাজধানী ঢাকাতে পৌঁছাতে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সময় বাঁচবে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা। সেতুটি ঘিরে নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনায় বিভোর এলাকাবাসী। পাশাপাশি সেতুটি সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন জেলাবাসী।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ জানান, রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা হবে। ঢাকার সঙ্গে কমবে দূরত্ব, বাঁচবে সময়। তাছাড়া আশপাশে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। যা এলাকার বেকারত্ব নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, রানীগঞ্জ সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে জগন্নাথপুরসহ জেলাবাসীর দীর্ঘদিন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে সেতুটি উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এসময় সবাইকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তিনি আহবান জানান।
সেতুর কাজের প্রোজেক্ট ম্যানেজার হারুন অর রশিদ বলেন, ইতোমধ্যে সেতুটির শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
সোমবার সেতুটি উদ্বোধনের পর ৬ মাস পর্যন্ত আমরাই টোল আদায় করবো।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু করেন। ২০০১ সালে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ওই সড়কের অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে সড়কের বরাদ্দ বন্ধ করে দিলে মহাসড়কের স্বপ্নের অকাল মৃত্যু হয়। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে সুনামগঞ্জ ৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসনের সংসদ সদস্য বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ওই আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ পুনরায় চালুর প্রচেষ্ঠা চালান। এক পর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার তালিকা সবুজ
পাতায় সড়কটি অন্তর্ভূক্ত করে একনেকে ৫২ কোটি টাকা অনুমোদন করান।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরেরর তথ্য মতে, ২০১৪ সালের ২৫ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন। পরে ওই বছরের জুন মাসে সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশ নেয় দেশী-বিদেশী তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অবশেষে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে যৌথভাবে কার্যাদেশ পায় চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২৪ বি এবং এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এমবিইএল। পরে ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্তমান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নানকে সাথে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণকাজ সময়সীমা তিন বছর ও ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ব্যয় এবং সময় বাড়ানো হয়।
এদিকে, সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রানীগঞ্জ সেতুসহ সুনামগঞ্জ জেলার ১৭টি সেতু রয়েছে। এদিন রানীগঞ্জ সেতু উদ্ধোধন উপলক্ষে রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নান।