বিশ্ব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ভুগছে বাংলাদেশও বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৬ নভেম্বর) সংসদে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে। আমি তো বলেছি আমাদের তৈরি থাকতে হবে যে কোনো অবস্থায়। আমরা তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে। মানুষ যেন সুস্থ থাকে।
সরকারপ্রধান তার বক্তব্যে দেশের আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি, রিজার্ভ ও বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিসহ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
ডলাররের ওপর চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ওপর একটা চাপ আছে। অবশ্য ঋণপত্র খোলার জন্য যে বাড়তি চাপ তা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। জানুয়ারি ২৩ থেকে যাতে ডলারের চাপ কেটে যায় সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি।
দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির বিষদ বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভ নিয়ে সবাই আলোচনা করে। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন রিজার্ভ পাই ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ক্ষমতায় এসে কিছুটা বাড়িয়েছিলাম প্রায় ৪ বিলিনের কাছাকাছি চলে আসি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়রি ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ পাই ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন কিন্তু এত রিজার্ভ নিয়ে এতো আলোচনা হয়নি। ৮ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে রিজার্ভ ছিলো ১৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ দফা ক্ষমতা গ্রহনে সময় ৭ জানুয়ারি ২০১৯ রিজার্ভ তখন রিজার্ভ ৩২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, ৩০ জুন ২০২০ রিজার্ভ ছিলো ৩৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ৩০ জুন ২০২১ তারিখে ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ৩০ জুন ২২ তারিখে ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা প্রায় ৪৮ বিলিয়রে কাছাকাছি গিয়েছিলাম। করোনার কমে যাওয়ার পর সব কিছু উন্মুক্ত হওয়ায় আমাদের আমদানী বাড়তে থাকে। সাথে সাথে আমাদের রিজার্ভ কমতে থাকলো। ৩ নভেম্বর ২০২২ তারিখে ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন আমাদের যে রিজার্ভ আছে। আমাদের যে রিজার্ভ আছে সেটা নিয়ে অন্তত ৫ মাসের আমদানি করা সম্ভব। আনর্জাতিক মানদণ্ডে যদি তিন মাসেরে আমদানি করার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।
তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ গেল কোথায়? শুধু বললে তো হবে না। আমরা বিনাপয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এই ভ্যাকসিন কিন্তু ডলার দিয়ে কিনতে হয়েছে। সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে। করোনাকালে চিকিৎসাকর্মীদের আলাদা ভাতা দিয়েছি।
সরকার সার্বিক বিষয়ে সতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার সাথে বসেছি। হ্যাঁ, সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। এখন থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের এই বিষয়টি পর্যালোচনা করা। ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয় সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের বিলাস দ্রব্যের আমদানি কমাতে হবে। বা এর ওপর আমাদের ট্যাক্সও বসাতে হবে বেশি করে।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হসিনা বলেন, দামি গাড়ি না চালালে…আমাদের আঙুর-আপেল না খেলে কী হয়? এখন তো আমাদের দেশীয় ফল তো প্রচুর আছে। আমাদের তরমুজ, আমরা কত কিছু আছে। আমাদের নিজেদের তো আছে। সবাইকে বলবো এই বিষয়ের প্রতি সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।
সরকারের ঋণ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক নয় এমনটি জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, সরকারি ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আমরা কোনদিনই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। আমরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যাই। আমরা কখনো ডিফল্টার হইনি। ভবিষ্যতেও ইনশাল্লাহ হবো না।