মৌলভী রবি খা প্রতিষ্ঠিত প্রায় তিনশত বছরের পুরনো “রবির হাট” আজ বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে। উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রায় মাইলখানেক বিস্তৃত,পূর্ব পশ্চিমে ছাড়িয়েছে ইউনিয়নের সীমানা।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত এ বাজারটি জেলার সর্ববৃহৎ হাট বাজার হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। বিশাল এলাকা বেষ্টিত, বিরাট জনগোষ্ঠী অধ্যূষিত এ বাজারটিতে চব্বিশ ঘণ্টাই লোক সমাগম থাকে। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এ বাজারে নানা পণ্যের ক্রয় বিক্রয় হয়। সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার এখানে বিশেষ হাট বসে। হাটবারে নিত্য পণ্য ছাড়াও গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হাস, মোরগ, কবুতর সহ নানা পাখপাখালি বিক্রয় হয়। আছে মাছের হাট, সবজির হাট, রকমারি পসারি পণ্যও আছে সারি সারি। কৃষি যন্ত্র এবং কৃষি উৎপাদিত পণ্য এখানে সুলভে পাওয়া যায়। সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় পানের আড়ৎ বসে এ বাজারে। সীমান্ত এলাকায় খাসিয়া ঝুমে উৎপাদিত পান এখান থেকে পাইকারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিলি বন্টন হয়। সীমান্ত এলাকা এবং পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় কাঠ প্রাপ্তির সুবিধা থাকায় এ বাজারে বিরাট ফার্ণিচার কারখানা ও শোরুম রয়েছে। যার সুনাম আছে দেশব্যাপী।
কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের যতগুলো ইউনিয়ন রয়েছে সব গুলো ইউনিয়নের মানুষই নানাকাজে এ বাজারে যাতায়াত বা সমবেত হয়। এ জন্য বাজারটিকে কুলাউড়া দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই নানামুখী কর্মকান্ড এবং ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পৃথিমপাশা তথা রবিরবাজার এলাকার আলাদা সুনাম,সুখ্যাতি এবং সমৃদ্ধি রয়েছে। আধুনিক বাজারে সুরম্য দালান ও নান্দনিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও ভিন্ন রকমের দাতব্য প্রতিষ্ঠান। সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হয়েছে দশটির মতো নামীদামী ব্যাংক। বিভিন্ন বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তো রয়েছেই। স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাও কাজ করছে ব্যাপক হারে রবিরবাজারে।
ঐতিহাসিক “রবিরবাজার জামে মসজিদ” এ বাজারকে আলাদা ব্যাপকতা,সুনাম ও সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষজন প্রতি সপ্তাহে বিশেষ করে শুক্রবারে এ মসজিদে ছুটে আসছে।
পৃথিমপাশা,কর্মধা,টিলাগাঁও,রাউৎগাঁও ইউনিয়নগুলোর মানুষের সাথে হাজীপুর,শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষের যোগসাজশের কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে রবিরবাজার। বহুল প্রতীক্ষিত মনু নদীর উপর নির্মিতব্য “রাজাপুর” ব্রীজ চালু হলে রবিরবাজারের সাথে সীমান্ত ইউনিয়নগুলোর সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন হবে। ফলে এ বাজারে মানুষের নিত্যদিনের উপস্থিতি আরো বহুগুণ বাড়বে। তাছাড়া ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক ট্রানজিট রোড স্থাপনে রবিরবাজারের বাণিজ্যিক সীমানা অপার বাংলা ছুঁয়ে যেতে পারে। কাজেই ভৌগোলিক কারণে রবিরবাজার এখন অনেক বিশাল বাণিজ্য হাট। অনেক বৃহৎ ও সমৃদ্ধ এলাকা। অনেক জনতার বিচরণ স্থল।
হাসপাতাল, পোস্ট অফিস,ভূমি অফিস,ইউনিয়ন কম্পপ্লেক্স, ব্যাংক,বীমা,এনজিও প্রতিষ্ঠান এবং প্রাথমিক,মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক,বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সহ সরকারি,বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত অনেক প্রতিষ্ঠানের সংযুক্তির কারণে রবিরবাজারকে “তৃণমুল শহর”ও বলা হয়ে থাকে।
তাই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বহমান রবিরবাজারের ব্যপ্তি ও বিশালতায় “উপজেলা” দাবি এখন সর্বজন গ্রাহ্য এবং যৌক্তিক।সময়ের ন্যায্য চাওয়া এবং সবার চাওয়া।
তাছাড়া ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ,ভৌগোলিক কারণ আর বিরাট জনগোষ্ঠীর মাঝে সেবার সহজলভ্যতার জন্যে হলেও রবিরবাজার উপজেলা করা নিতান্তই জরুরী। জেলার কমলগঞ্জ, জুড়ি যতটা পরিসর নিয়ে, উপজীব্য নিয়ে উপজেলা বাস্তবায়িত হয়েছে তার কোনো অংশেই কমতি নেই রবিরবাজারের। বরং বহুলাংশে সমৃদ্ধ আমাদের সবার প্রিয় রবিরবাজার।