ইতালির রোম দূতাবাসে বাংলা বর্ষবরণ বর্ণিল উদযাপন

প্রকাশিত: ১:১২ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২৩ | আপডেট: ১:১২:অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২৩

মিনহাজ হোসেন বিশেষ প্রতিনিধি:‌

 

ইতালিস্হ বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষে ১৮ মে ২০২৩ তারিখে এক আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । পিঠা উৎসব সুমধুর গান দৃষ্টিনন্দর নাচ এবং ঐতিহ্যবাহী দেশীয় বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় এ বর্ণিল আয়োজনে‌।

অনুষ্ঠানে ইতালির পররাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ রোমস্হ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/স্থায়ী প্রতিনিধি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কূটনীতিকগণ ছাড়াও জাতিসংঘের কর্মকর্তাবৃন্দ ইতালির সুশীল সমাজের প্রতিনিধি,সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের অনারারী কনসালগণ এবং দূতাবাস ও মিলান কনস্যুলেটর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শামীম আহসান ও তাঁর সহধর্মিনী পেন্ডোরা চৌধুরী আমন্ত্রিত অতিথিদের বৈশাখের উত্তরীয় দিয়ে তাদের উষ্ণভাবে বরণ করে নেন এবং তাদের সাথে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
দূতাবাসের সন্মুখের সড়কে আয়োজিত বাংলার ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রচুর বিদেশী অতিথি সহ দূতাবাস পরিবারের সদস্যরা বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাঙালি সংস্কৃতির দীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনীতিক উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ইউনেস্কো কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রাকে মানবজাতির বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দানের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, এটি বাংলাদেশের নববর্ষ উদযাপনে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের জন্য নববর্ষ আরো সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু রহমান কর্তৃক পহেলা বৈশাখ কে সরকারি ছুটি ঘোষণা ও দিনটি সাড়ম্বরে উদযাপনের কথা উল্লেখ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগের সেন্ট্রাল ডিরেক্টর মিনিস্টার আলেকসান্দ্রা স্কিয়াভো অনুষ্ঠানে “গেস্ট অফ অনার” হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

 

তিনি তার বক্তব্যে ইতালিতে বসবাসকারী বাঙালি কমিউনিটির ভূয়সী প্রশংসার পাশাপাশি তাদের সক্রিয়তা ও নিজস্ব সংস্কৃতিক চর্চার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন একই সাথে ইতালিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতির ইতালীস্থ বাংলাদেশী কমিউনিটির মিথস্ক্রিয়ার গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন।

তিনি উল্লেখ করেন যে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইতালির সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদান রাখছে ,সাম্প্রতিক সময়ে ইতালি-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্কের তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

 

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতালির লুমসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট বন্ধু ডক্টর ফ্রান্সেস্কো জানিনী। তিনি উল্লেখ করেন যে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের যে প্রচলিত রীতি তা হাজার বছরের বাংলা বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধারণা লালনের এক অনন্য নিদর্শন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে এই ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর তিনি আলোকপাত করেন‌ তিনি নববর্ষ উপলক্ষে দূতাবাসের বর্ণিল আয়োজনের জন্য দূতাবাসকে অভিনন্দন জানান এবং এধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

 

আলোচনা সভার পরে প্রবাসী বাংলাদেশী ও ইতালিও শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিশেষত ইতালীয় শিল্পীর কন্ঠে বাংলা গান অতিথিদের মুগ্ধ করে।

 

নববর্ষ উপলক্ষে দূতাবাসের একটি রঙিন দ্বিভাষিক প্রকাশনা অতিথিদের মাঝে বিতরণ করা হয় যা উপস্থিত সকলের মাঝে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ঐতিহ্যগত দিকগুলো ফুটিয়ে তোলে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি বৃন্দকে বাংলাদেশি বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়।

 

 

দূতাবাস প্রাঙ্গণে স্থাপিত পালকি, মেহেদী, পান ও ঝাল-মুড়ির স্টল ও পিঠাঘর উপস্থিত বিদেশি অতিথিবৃন্দের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে দূতাবাসকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অনেক অনুষঙ্গ দিয়ে সুসজ্জিত করা হয় যা সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সকলের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি করে।