নিজের অবলোকনে অবাক কান্ডগুলো নিজেকেই ভাবায়-কোন দিকে যাচ্ছে প্রিয় প্রজন্ম?
আমি দেখেছি বলে লিখছিনা,আমি জানি বলে জানাচ্ছি না।আমি কেবল প্রজন্মকে সজাগ করছি,সম্মানিত অভিভাবক, সমাজপতি এবং গুরুজনদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করে নজরে আনছি।
অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া প্রবাসী পিতার কনিষ্ঠ সন্তান জনৈক কিশোর (অনেকটা শিশুই বলা চলে) মায়ের ব্যাংক একাউন্টে জমা প্রায় ৩ লক্ষ টাকা মায়ের এন আই ডি ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্টে দেয়া মায়ের মোবাইল নাম্বার দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলে বিকাশ অ্যাপসের মাধ্যমে ধাপে ধাপে উত্তোলন করেছে। ৫০০,১০০০,৫০০০,১০০০০,২০০০০ অংকে অক্টোবর-২২ হতে মার্চ-২৩ এই কয়েক মাসেই সব টাকা শেষ করে সদ্য প্রবাস ফেরত বাবার এটিএম কার্ড ব্যবহার করে আরো প্রায় ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাবা বুথে গিয়ে ক্যাশ নীল দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন সব টাকাই নিজ কার্ডে উত্তোলন করা হয়েছে। আশ্চর্য হয়ে একধাপ এগিয়ে খোঁজ পেলেন আপন ছেলেই এ কান্ড করেছে! অবাক বিস্ময়ে তিনি অঝোর ধারায় নয়ন জলে একেবারে থো হয়ে গেলেন। একদিন পর মা গেলেন ব্যাংকে, গিয়ে তিনি জানতে পারলেন তার একাউন্ট খালি। হতভম্ব হয়ে জানতে চাইলেন কেমন করে কোথায় গেলো টাকাগুলো। বিকাশ অ্যাপসে নিজ নাম্বারেই গেছে সব টাকা। পাগলপ্রায় মা স্ব-জ্ঞানে নেই এখন অবধি। খাওয়া নেই,ঘুম নেই,গোসল নেই বিলাপ করছেন অবিরত।
ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে প্রথমেই ডাহা অস্বীকার অতঃপর চাপাচাপিতে সত্য স্বীকারপূর্বক বললো গেইম খেলেছি ফ্রী ফায়ার পাপজি!
টিকটক ভিডিও ধারন করে টপ ফেভারিট হতে গিয়ে টিকটক বন্ধু হিরোইনখোর টিকটকারের প্ররোচনায় ডুবে ৭ম শ্রেণির বালিকা মা বাবার অগোচরে নানা ফন্দি ফিকির করছে পরিবারে, অস্বাভাবিক পাগলামি আচরণে দূর প্রবাসে ঢুকরে কাঁদছে পিতা। শিশু কন্যার উদ্ভট কান্ডে শংকিত স্বজনরাও।
চ্যালেঞ্জিং গেমসে মেতে ধাপ উত্তরণের এক পর্যায়ে মৃত্যুর ঘাট উত্তরণের দুর্বার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুরন্ত বালক রশিতে ঝুলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।
পরলোকগত পিতার দরিদ্র বড় সন্তান জনৈক সিএনজি চালক যুবক বিশ্বকাপ ফুটবলে বাজিমাত মোবাইল গেইমসে ঋণগ্রস্ত হতে হতে অবশেষে জমি বিক্রির টাকা সমেত কিস্তিতে কেনা নিজ সিএনজি বিক্রি করেও ধারদেনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি বিপর্যস্ত পরিবার না খেয়ে থাকলেও মোবাইল জোয়ার নেশা ছাড়তে পারেনি কথিত যুবক। মার খেয়ে কয়েকবার বিচারের মুখোমুখি হলেও সেই বদঅভ্যাসের পিছু ছাড়েনি আজও সে। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে দিশেহারা মা, বলতে গেলে বর্তমানে দিন ভিখারি।
প্রবাসী পরিবারের কলেজ পড়ুয়া ছোট ছেলে,মা ভাই বোন সবার একাউন্ট থেকে পরম বিশ্বস্থতায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মোবাইল জুয়াড়িতে ফতুর হয়েছে। ঋণ করেছে নানাভাবে আরো বহু টাকা। ক্রমান্বয়ে স্ব স্ব একাউন্ট শূন্য দেখে মা ভাই বোন সকলেই হা-হুতাশে দীর্ঘ অসুস্থতার কবলে পড়েছেন। সালিশ বিচার মামলা জটিলতা সহ ঋণ পরিশোধের জটর জালা মিটাতে গিয়ে দুর্দশাপন্ন ক্লান্ত জীবন পার করছেন সকলেই।
মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলেমেয়ে মোবাইল প্রেমে মগ্ন হয়ে অসময়ে হলফনামায় বিয়ে সেরে অসীম সাহসিকতায় বাড়িতে হাজির হয়ে দাম্পত্য অধিকার লাভে ছড়াও হয়েছেন পরিবারে। বিবাহের বয়স না হওয়া বড় ছেলে দেশের বাহিরে, ছোট ছেলে নিজে নিজে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে ঘরে, লজ্জা অপমানে কিংকর্তব্যবিমূঢ় মা-বাবা! ধরি না ছাড়ি, রাখি না মারি দশায় শেষমেশ ঘরের বোঝা করে বউ উঠিয়ে এখন ঝগড়াঝাটিতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন পরিবার।
ঘটনাগুলো অতি বাস্তব এবং আমার চক্ষু সার বটে। এখানে ক’টি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ননা করেছি মাত্র। এমন ঘটনা আজ নিত্য ব্যতিক্রম পন্থায় অহরহ ঘটছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অনেক সময় সমাজ প্রতিবেশি স্বজনের অগোচরেই মিটমাট করে ইজ্জত বাঁচাও ফর্মূলায় আছে।
কিন্তু কালেভদ্রে আমরা কি রেহাই পাচ্ছি এ প্রজন্মের অতি সেয়ানা ইন্টারনেট মগ্ন মোবাইলে ডুবে থাকা কিশোর কিশোরীর কু-কান্ড থেকে?
তারাও কি নিজেরা নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে,বিপদ সংকুল করে, ব্যক্তি ও পরিবারে সংকট তৈরি করে তাদের সুন্দর জীবনকে অংকুরেই বিনষ্ট করছে না?
এখনই ভাববার বিষয় আমাদের সকলের।